সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ১)

পিরিচ পেয়ালার ও একটি সন্ধ্যা

পিরিচ পেয়ালার ঠুংঠাং- এ ভরে ওঠে সন্ধ্যা, সাথে ভীমসেন মেজাজী আড্ডা৷ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী কচ্ছ থেকে কোহিমা গোটা ভারতটা ঘুরে ফেলি কিংবা বলা কি যায় গোটা পৃথিবীটাই হয়ত ঘুরে ফেলি আমরা আড্ডা দিতে দিতে৷ আর বিষয়? সম্পর্ক থেকে রসায়ন, রাজনীতি থেকে সংস্কৃতি কোন বিষয়ে আলোচনা হয় না বলুন তো এই আড্ডায়! যেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বারেবারে ধরা পড়ে পিরিচ পেয়ালার এই সন্ধ্যার আড্ডায়৷
তেমনই এক সন্ধ্যায় ভুল নিয়ে বাঁধল গোল৷ কোনটা ভুল আর কোনটা অন্যায় তাই নিয়ে চলল বিস্তর তর্ক৷
একেবারে চুলচেরা বিচার৷ নিত্তি মেপে এগানো৷ সমানুপাত ব্যস্তানুপাত কিছু কি বাকি থাকল? আমার আবার হিসেব কষাকষির এমন বহর দেখলে কেশব চন্দ্র নাগের কথা ভারি মনে হয়৷ আর ঐ বাঁদরটার কথা
তেল মাখা ডান্ডায় কিছুটা উঠছে আবার স্লিপ করে ততটাই নেমে আসছে৷
আজ সকাল থেকেই জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালেই মনে হচ্ছে হাজার সোনার হরিণ যেন ছুটে বেরাচ্ছে আকাশের গায়ে৷ সোনার আলোর ছোঁয়ায় ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট তুমি আমি, সব কিছু কেমন সোনারং মেখেছে৷ তোমার ঠোঁটে গালে সারা শরীরে লেগে সেই রং৷ আমি সোনালি রঙ মাখতে মাখতে ক্রমে সোনার গাছ হয়ে উঠছি৷ আমার রঙের আকর্ষণে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রজাপতিরা বাসা বেঁধেছে আমার শরীরে৷ সোনালি ঘাস, সোনালি অরণ্যবনরাজি, সোনালি নদী, সোনালী পাখি ফল , সে এক আশ্চর্য মায়াময় ইন্দ্রজালে আমি জড়িয়ে পড়ছি ক্রমাগত৷
কত মঞ্চ সেজেছে এই সোনালি আলোয়! যবনিকার আগে পিছে কত ঘটনা সাজান হয়েছে৷ কত কুশীলব কত পরিচালক, সৃষ্টিকে গড়া পেটা৷ ওদের সবাইকে আমার এক একটা সোনালী পুতুল মনে হচ্ছে৷ দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তর৷ ধুঁয়োপাহার, ফুলসজ্জা৷ অয়দিপাউস, টিনের তলোয়ার, চন্দ্রগুপ্ত৷ করতালি, আনন্দ উল্লাস৷ সৃষ্টির ইতিহাসে দাগ কেটে যায় শব্দের জাগলারি৷ অভিনয়ে মাদক ঢালা৷ সোনালী বুদবুদে ঘেরা স্বপ্নগুলো জিরতে থাকে, ভাসতে থাকে, লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে ক্রমশঃ বড় হতে থাকে৷
এত সোনালী আলোতেই তো ধাঁ ধাঁ লাগে চোখে! ভুল হয় ভ্রম নড়ে ওঠে৷ হাতড়ে হাতড়ে ছুঁয়ে ফেলি দিনপঞ্জীকা৷ এ যে শ্রাবনের শেষাশেষি শরতের প্রাক্কাল! তাই বুঝি এত আলো এত সোনাগলা রোদ৷ এই সেরেছে! তাহলে সবটাই কি ভুল ? সোনালী মানুষ, ঘরবাড়ি, গাছপালা, নদী, মঞ্চ, সোনালী পুতুলেরা, সবটাই ভ্রম, সবটাই ভুল? যা ভেবেছি, যা বলেছি সবটাই ভুল? কখনও কখনও ভুলও এত মায়ামাখা হয়, এত স্বপ্ন বিভোর, এমন আগুনপাখি হয় যে বারবার সেই ভুলগুলোর কাছে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে৷
তবু ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে আপনাদের কাছে, আমার ভুল হয়েছে৷ হয়ত আমার কথা শুনতে গিয়ে
অযথা আপনাদের সময় নষ্ট হয়েছে, তবে অন্যায় করিনি মোটেই, কারণ আমার ভুলের জন্য আপনাদের কোন ক্ষতি হয়নি নিশ্চয়ই, ব্যস্ ওতেই হবে৷ নিজের পিঠ নিজেই চাপড়ে বললাম এই জীবন শিখিয়ে দেয় জীবন ও যাপনের কতই না সংগা! তার জন্য সব সময় ভারি ভারি তথ্য, সূত্র বা কেশব চন্দ্র নাগ কিছুরই প্রয়োজন হয় না
আসছে সপ্তাহে আমাদের সন্ধ্যার আড্ডায় আবার কী নিয়ে দক্ষযজ্ঞ বাঁধে দেখি! চিন্তা করবেন না, একেবার সেই বিষয়টা নিয়েই চলে আসব আগামী সপ্তাহে ” পেয়ালা পিরিচ ও একটি সন্ধ্যা”-র পরের পর্বে৷ ভালো থাকুক সকলে৷
*বিঃদ্রঃ পেয়ালা পিরিচ সহযোগে সন্ধ্যায় আপনিও জমিয়ে আড্ডা মারুন
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।