এই দিনটা এলেই কেমন সাজোসাজো রব পড়ে যায়। তিনদিন আগে থেকেই হোমের পুরো চত্বরে ঝাড়পোঁছ শুরু হয়ে যায়, ঘরগুলো পরিষ্কার করা হয়, ফটকে বাতি লাগানো হয়। আর এটাও শান্তি জানে যে, এই কদিন তাদের ভাল খাবার জুটবে, নতুন পোশাকও জুটে যেতে পারে। সবমিলিয়ে সবাই বেশ খুশি। শান্তিও খুশিই থাকে। কেন যেন ফিরে যায় পাঁচ বছর আগে! আসামের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের চা বাগানে বাবা-মায়ের ঝুপড়িতে থাকত। চা শ্রমিকের মেয়ে বলে কথা। কোনক্রমে খেয়ে পড়ে বাঁচা। কাছের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা। বস্তিজীবনে এর বেশি আর কী আশা!
হঠাৎ স্বপ্নের মতো ভেসে এল হাতছানি। আর তাতেই ভেসে চলা দূরদেশে। ভালো নাচত, তাই নাচকে ঘিরেই স্বপ্নবোনা। হায় অদৃশ্য! কে জানত যে স্বপ্নের পদে পদে ছড়ানো ছিল ফাঁদ। ঝলমলে আলোর পেছনে ছিল নিকষ কালো অন্ধকার। এক শিল্পী মন ছিল শান্তির। তার প্রতি পদক্ষেপে ছিল ছন্দের ঝংকার। সেখানেই বাঁধা হল নিষিদ্ধ নূপুরধ্বনি। সেখান থেকে প্রাণপণে স্বাধীনতা খুঁজত সে। এরাই কী ইংরেজ! এদের কথাই কী সে শুনেছে, অল্পস্বল্প বইতে পড়েছে! তারপর এক ভোরে সবার চোখে ধুলো দিয়ে উড়ে গেল সে খাঁচা থেকে। অনেক পথ ঘুরে অবশেষে এখানে।
বেশ আছে এখন। সেলাই, বাগান সব সেরেও সে অবসর সময়ে আবার ঝংকার তোলে। ছন্দে ভেসে যায়।