১. অরুণাচল প্রদেশে তাওয়াং নদীর অববাহিকায় অবস্থিত ভারতের বৃহত্তম আর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধগুম্ফা হল তাওয়াং। তিব্বতি ভাষায় যাকে বলা হয়, Gaden Namgyal Lhatse অর্থাৎ Celestial Paradise in a clear night.
২. এই তাওয়াং এর খুবই কাছে রয়েছে বুমলা পাস, ভারত- চীন সীমান্ত। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের সময় এই অঞ্চলটি চীনের দখলে চলে যায়।
৩. ১৬৮১ সালে তৈরি হয় এই বৌদ্ধগুম্ফাটি। প্রায় ৫০০ বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এখানে বসবাস করেন। এই মনেস্টারিতেই জন্মেছিলেন ষষ্ঠ দলাই লামা।
৪. প্রায় ৩০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই গুম্ফায় ৪৫০টি বসবাসযোগ্য ঘর আছে। যেখানে প্রায় ৭৫০ জন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী থাকতে পারেন।
৫. মনেস্টারির প্রধান প্রার্থনাস্থলে ঢুকেই চোখে পড়ে ১৮ ফিট লম্বা বুদ্ধমূর্তি, যেটি পদ্মের উপর উপবিত। পুরো হলঘরটিতে রয়েছে অপূর্ব বৌদ্ধিক শিল্পকলার নিদর্শন, অসংখ্য থাঙ্কা আর মোরাল রয়েছে এর দেওয়াল জুড়ে।
৬. এই বৌদ্ধ গুম্ফাটি তিনতলা। প্রধান প্রার্থনাস্থল ছাড়াও এখানে রয়েছে স্টাডি সেন্টার ও সংগ্রহশালা। এই গুম্ফার নিজস্ব ছাপখানা আছে। এই গুম্ফার সংগ্রহশালায় রয়েছে অষ্টসহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতার মতো বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য পুঁথি।
৭. ১৯৫৯ সালে চীনের বিরুদ্ধে বিপ্লব বিফলে গেলে ১৪ তম দলাই লামা এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
৮. বৌদ্ধদের গেলুপা গোষ্ঠীর এই গুম্ফা তৈরির পিছনে একটি মিথ রয়েছে। পঞ্চম দলাই লামার আদেশে লামা লর্দে গ্যাসো একটি গুম্ফা প্রতিষ্ঠার জন্য জায়গা খুঁজছিলেন।
৯. জায়গা খুঁজতে খুঁজতে তিনি একসময় ক্লান্ত হয়ে একটি পাহাড়ের গুহায় প্রার্থনায় বসেন, পরে এসে তার ঘোড়াটিকে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে দেখেন, ঘোড়াটি পাহাড়ের উপর একটি সমতল জায়গায় ঘাস খাচ্ছে। ঐ সমতল জায়গাটিকেই গ্যাসো গুম্ফা নির্মাণের আদর্শ স্থান বলে বেছে নেন।
১০. তাওয়াং শব্দের মানে এই গল্পের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। তিব্বতি ভাষায় তা মানে ঘোড়া আর ওয়াং মানে পছন্দ।অর্থাৎ তাওয়াং শব্দের মানে ঘোড়ার পছন্দের স্থান।
১১. তাওয়াং সার্কিট হাউজের কাছে একটি রাজকীয় বিশালাকায় বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে, যেটি পুরো তাওয়াং শহরের সব জায়গা থেকে দেখা যায়।
১২. সাম্প্রতিক অতীতে ২০০৯ সালে দলাই লামা এই মনেস্টারিতে আসেন। সেইসময় তিব্বত, নেপাল, ভূটান থেকে প্রায় ৩০০০০ মানুষ এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
১৩. বৌদ্ধদের বজ্রযান শাখার এই গুম্ফার প্রতিটি কোনায় রয়েছে রহস্য আর সৌন্দর্যের ছোঁয়া।