অণুগল্পে প্রদীপ সেন

লক্ষ্মী ফিরে এলো

নেহা ভাবতেই পারেনি বিয়ের দুবছরের মধ্যেই ওর আর সুজয়ের মধ্যে অঘোষিত ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবে। দোষ যতোটা না সুজয়ের তার শত গুণ সুজয়ের মা রত্নার। সংসারে রত্নার একছত্র আধিপত্য। ছেলে সুজয় আর তার বাবা অমল কেউই রত্নার দৃঢ় আধিপত্যের লক্ষ্মণরেখা টপকাতে পারে না। নেহা প্রথম প্রথম মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। শিক্ষিতা নেহা বেশ আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মেয়ে। তাই শাশুড়ি যখন মিছরির ছুরি চালিয়ে ওর বাপ-মা তুলে টিপ্পনি কাটতে শুরু করে, নেহা মুখ খোলে। চির প্রতিবাদী মনটার পায়ে বেড়ি পড়িয়ে তাকে বশ্য রাখতে পারেনি নেহা।
ক্রমে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে শুরু করে। বেচারা সুজয় মায়ের বিরোধিতা করতেও পারছে না নেহাকেও থামাতে পারছে না। সুজয় জানে মা যেমন ধারার পিত্তি-জ্বালাকরা ভাষায় নেহাকে এফোঁড়-ওফোঁড় করতে শুরু করেছেন তাতে নেহাকে থামতে বলা অন্যায়। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হয় সুজয়ের। নেহাকে সে খুব ভালো বাসতো, কিন্তু মায়ের ভয়ে সে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে পারতো না।
সেদিন অফিসে বেশ খাটা-খাটুনি করে আর নেহার কথা ভেবে ভেবে অমলদার পাল্লায় পড়ে সুজয় কয়েক ঢোক গিলে এসে রাতে বাড়িতে পা রাখতেই প্রবল বাক-যুদ্ধের সাক্ষী হয়। বোন ইন্দ্রাণীও এসেছে। মাকে তাতিয়ে দিচ্ছে সে। শ্বশুর অসহায়ের মতো সাংসারিক কুরুক্ষেত্র চেয়ে চেয়ে দেখছেন। এ যে গজ-কচ্ছপের যুদ্ধ, থামার লক্ষণ নেই।
আত্ম-সংযম টুটে যায় সুজয়ের। মায়ের ওপর রাগ নেহার ওপর মেটাতে গিয়ে সে নেহার গালে একটা চড় কষে। নেহা সেটা হজম করতে পারেনি। এক কাপড়ে তখনই ঘর ছেড়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায়। সেই থেকে আজ তিন বছর ধরে নেহা বাপের বাড়ি। সুজয় কয়েক বার ফোন করলেও নেহা ফোন ধরেনি।
সেদিন এক আননোন নাম্বার থেকে ফোন এলো। ওপারে শাশুড়ির গলা, কাঁদো-কাঁদো। মা, তুমি আমার ঘরের লক্ষ্মী। তোমার প্রতি অন্যায় করার শাস্তি ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন। তোমার শ্বশুর স্ট্রোকে বিছানায়। আজ অফিস যাবার পথে সুজয়ের বাইকে মেজর অ্যাক্সিডেন্ট। সে হাসপাতালে। আমি ক্ষমা চাইছি, মা। আমার ঘরের লক্ষ্মী ঘরে ফিরে এসো।
নেহার হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে গেলো। দুচোখ থেকে লবণাক্ত জলের ধারা গাল বেয়ে নামতে থাকে। কখন তার পা দুটো ওকে পথে নামিয়েছে সে খেয়াল নেই।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।