অণুগল্পে পার্থপ্রতিম পাঁজা

‘এ মা!’

“কেউ কি আছে বাড়িতে? সম্পূর্ণা একা আছে তো, সে তো ভয় পাচ্ছে । সম্পূর্ণার বাবা কোথায় গেল? মেয়ের পাশে বসতে পারছে না?” ঠানদি-সুলভ এত কথা যার কাছ থেকে শুনতে পাওয়া গেল সে-ই আসলে সম্পূর্ণা, বছর তিনেকের একটা ফুটফুটে মেয়ে! ওর সব কথাই এমন পাকা পাকা। সারাদিন কথাবাজিতে বাড়ির সকলকে তঠস্ত করে রেখেছে। বাড়ির বাইরে পাড়ার ক্লাব, সেখানে পটিদার কালী ঠাকুর গড়ছে। ওদের জানালা দিয়ে সব দেখতে পাওয়া যায় । ও ঘুম থেকে উঠেই সে দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকে। যেন ওর বিশাল দায়িত্ব। কতটা কাজ এগোলো তার হিসেব রাখতে হবে তো! মাঝেমাঝেই ওর মনে অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্ন জাগে। সেদিনই তো হঠাৎ করে ও প্রশ্ন করল ওর মা পূর্ণিমাকে, “প্রতিবারেই কি শিব মা কালীর কাছে হেরে যাবে? একবারও জিতবে না? একবারও কি শিব কালীর উপর দাঁড়াতে পারবেনা?” ‌ এই প্রশ্নের কিইবা উত্তর দিতে পারে মা? মিষ্টি করে গাল টিপে দিয়ে নিজের কাজে চলে যায়। কিন্তু এত সহজে ওর মা ওর প্রশ্নবাণ থেকে মুক্তি পায় না। কদিন থেকেই আর একটা প্রশ্ন জেগেছে ওর মনে। তাই নিয়ে ও প্রতিদিনই উত্ত্যক্ত করছে মাকে, “মা কালী কি এমনই থাকবে, আর কিছু পরবে না?” মা ওকে বলেছে, “কেন পরবে না? মুণ্ডমালা পরবে, মুকুট পরবে, কাটা হাতের ঝালর পরবে…..” ও তার সঙ্গে যোগ করে দেয়, “ব্লাউজ পরবে, সায়া পরবে, শাড়ি পরবে……?” মা বেচারী আর কি করে, ওর কথায় সায় দিয়ে কোনোরকমে পালিয়ে বাঁচে। কালীপুজোর দিন। জানালায় চোখ রেখে ছোট্ট মেয়ের তো চক্ষুস্থির। মা তাহলে মিথ্যে বলেছিল? “এ মা! শাড়ি-ব্লাউজ না হয় না হল, কালী মায়ের একটা ছোট্ট ফ্রকও জোটেনি!” রান্নাঘরে কড়াই-এর উপর খুন্তির আওয়াজ যেন হঠাৎ করে বেড়ে গেল। ওদিকে লাউডস্পিকারে ভক্তি রসের গান বেজেই চলছে– ‘বসন পরো মা………’।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।