গদ্য বোলো না -তে পরিমল মন্ডল

রাজার সমাজ সেবা

বিস্কুট কারখানায় কাজ করতো রাজা।করোনা আবহে রেল বন্ধ থাকায় কাজে যাওয়া হয় না তার।হয়তো কাজটা ও নেই তার।বউ মিতা বরাবর ই পরিশ্রমী মেয়ে। প্রেম করে বিয়ে।বাবা মায়ের মেনে না নেওয়া।তাই বিয়ের পরের দিন থেকেই বাড়িতে বসেই জব অর্ডারে সেলাইয়ের কাজ করে।যা হয় করে সংসার চলে যায় তাদের।তাও নয় নয় করে বিয়ের চার বছর হয়ে গেছে।
না কোনো সন্তান নেই তাদের।রাজা বরাবরই পরোপকারী।কাজ নেই তাতে কি? কোনো টেনশন নেই তার।পাড়ার যে কোনো কাজে উৎসাহের কোনো ঘাটতি নেই তার।না কোনো রাজনীতি টিতির ঝান্ডা ধরা কাজে যায় না সে।এককথায় মানবদরদি রাজা ।এখন কোভিদ 19 চলছে, কি এক ভয়ংকর নাকি রোগ।কার মধ্যে কি ভাবে পৌঁছে যাচ্ছে নাকি বোঝার জো নেই।তাই জন্যে তো সরকার লকডাউন করেছে।কারোর সাথে কারোর ছোঁয়া ছুঁই যেন না হয়।কি সব সামাজিক দূরত্ব রেখে নাকি চলতে হবে।মাস্ক ছাড়া বাইরে তো যাওয়াই যাবে না।গেলেই পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে।সরে সরে থাকার হিড়িক পড়েছে।পাড়ায় কারো আসুক করলে আর ধারে কাছে ঘেঁষছে না কেউ।স্থানীয় ডাক্তার গুলো ও সব পাতা তাড়ি গুছিয়ে নাকি হোম কোয়ারেন্টাইন আছে।ফোন করলে ও ফোন ধরার বালাই নেই।রাজার কাছে এই সব কিছু অসস্তিকর মনে হয়।মেনে নিতে পারে না এই সব হঠাৎ করে বদলে যাওয়া।পার্থক্য খুঁজতে থাকে মানুষের সাথে পশুদের।না কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছে না সে।বউ কে বলে কিছু একটা করার দরকার।বউ চুপ চাপ থাকে।
আজ রাতে রেশনে দেওয়া চালের ভাত আর আলু সেদ্ধ খেতে হবে তাদের।কারন কাল সাপ্তাহিক পেমেন্ট পাবে মিতা।গত সপ্তাহে মালিক টাকা দিতে পারে নি।তাই ডাল সবজি ও ফুরিয়েছে।তাতে কি কারোরই আক্ষেপ নেই।দুজনে এক সাথে খেতে বসে।রাজা টিভি তে সংবাদ চালায়।বিজ্ঞাপন হচ্ছে এখন।মিতা বলে কাছাকাছি কোথাও একটা কাজ খুঁজতে রাজা কে। টিভিতে সংবাদ শুরু হয়। হঠাৎ স্তম্ভিত হয়ে যায় রাজা পাশের গ্রামের অতনুর দাদুকে দেখাচ্ছে।গত কাল নাকি হৃদ রোগে বাড়িতেই মারা গেছে । কেউ সেই বাড়ির আসে পাশে যাচ্ছে না।সেটাই এক ঝলক দেখালো টিভিতে।অতনু তো ব্যাঙ্গালোর থাকে।লক ডাউন চলছে, ট্রেন চলছে না তাই পুরুষ বর্জিত পরিবার এখন।কারন অতনুর বাবা নেই ,মা আর দাদু।খেতে খেতে হাত ঝাড়া মেরে উঠে পড়ে রাজা।গেঞ্জি টা গলিয়ে নিয়ে দ্রুত পা চালিয়ে বেরিয়ে যায় রাজা। মিতা জোর করে মাস্ক পরিয়ে দেয় রাজা কে।সাবধানতা অবলম্বন করতে বলে।
রাজা পৌঁছে যায় অতনু দের বাড়ি।অতনুর মা তাঁর বাবা কে আঁকড়ে মাথা নিচু করে বসে আছে দেখে সে।অনেক টা দূরে একটা পুলিশের গাড়ি দেখা যায়।একটা শব্বাহি গাড়ি এসে দাঁড়ায়।প্রশাসন ই হয়তো প্রায় আটচল্লিশ ঘন্টার মাথায় ব্যাবস্থা করেছে।শব্বাহি চালক আর রাজা হাত লাগিয়ে বডি তোলে গাড়ি তে।রাজা আর অতনুর মা সব দাহ করে ফেরে।ভোর হয়ে যায়।রাজা বাড়ি ফেরে। অতনুর মাকে অভয় দিয়ে আসে।বলে “মাসিমা আমি হয়তো কাজ হারিয়েছি কিন্তু মানবতা হারাইনি।যে কোনো সমস্যায় আমাকে ডাকবেন ।একটা কাগজের টুকরো তে নিজের নাম্বার টা দিয়ে আসে সে।সেই দিন বেশ কিছু পোস্টার কাগজ কেনে রাজা।আর সেখানে আঁকা বাঁকা হাতের লেখায় বড় বড় করে লেখে “যেকোনো অসুস্থার কারনে ফোন করুন এই নম্বরে সহযোগিতা করবে রাজা”।মেরে দেয় পাড়া র দেওয়ালে দেওয়ালে ।খবর বাতাসে ভাসতে থাকে।মিডিয়া আসে অনেক নেতা আসে রাজার কাছে।সহযোগিতার হাত বাড়াতে চায় তারা।অনেক সঙ্গী ও পায় সে।খুব নাম ডাক হয় রাজার।এখন কোভিদ 19 এ সহযোগিতা করার মস্ত একটা টিম হয় রাজার।মন্ত্রীর কানে ও এই খবর যায়।একদিন রাজার কাছে নিজেই চলে আসে মন্ত্রী।কি সহযোগিতা চায় তারা জিজ্ঞেস করে।উত্তরে রাজা বলে,আমরা মানবিকতার কাজটাই শুধু করছি যা আমাদের সবার এটা নৈতিক কর্তব্য।আপনি যে এসেছেন এই আমাদের চরম সৌভাগ্য ,আপনাকেও আমাদের সাথে পেতে চাই আর আমরা শুধু আপনার কাছে একটা করে চাকরি চাই।আর কিছু চাই না।মন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে চলে যায়।চলতে থাকে রাজার খালি পেটে সমাজ সেবা।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।