স্বাধীনতা বলতে সাধারণত আমরা বুঝি ১৫ ই আগস্ট, দেশাত্মবোধক গান, দেশভক্তির সিনেমা। আরো আধুনিক সংস্করণ হলো বাইকে বা গাড়ীতে ভারতের পতাকা, স্টিকার লাগানো, সোস্যাল মিডিয়ায় দেশ নিয়ে ভালো ভালো পোস্ট করা।
কিন্তু স্বাধীনতার পরিসর এতটাও ক্ষুদ্র বলে মনে হয় না। স্বাধীনতা কথাটার মধ্যে বিশাল ব্যাপ্তি, বিশাল প্রসারণের খোঁজ মেলে।
আমি আমার মতো করে একটু বলার চেষ্টা করছি। আপনারাও ভেবে দেখুন।
১. কোন জায়গায় কোনো cirme হল। পুলিশ – প্রসাশণ সেখানে পৌঁছানোর পূর্বেই তাদের কাছে কোনো নেতা বা মন্ত্রীর ফোন এল। ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁরা নিজের মতো আর কাজ করতে পারলেন না। আদেশানুরূপ কাজ করতে বাধ্য হলেন।
ওনারা কি চান না ওই ফোন আসা বন্ধ হোক। ওঁদের কাজ ওঁরাই করুন।
এটা যেদিন হবে, সেদিন থেকে হবে ওঁদের স্বাধীনতা।
২. যে ছেলেটা সারাদিন খাটে কোম্পানির জন্য, অফিসের জন্য। তারপরেও ক্লান্ত দেহমনে যখন বসের মুখ ঝামটা শোনে। ও যদি পারে ব্যাগে ভরে রাখা resignation letter টা বসের মুখের উপর ছুঁড়ে দিতে, সেটাই হবে ওর স্বাধীনতা।
৩. অফিস থেকে বা কাজ থেকে ফিরতে রাত হয় যে মেয়েদের। রাস্তায় কোন নরপিশাচ ওৎ পেতে থাকবে না। নির্ভয়ে, নির্দ্বিধায় বাড়ী পৌঁছতে পারবে ওরা, ওটাই হবে ওদের স্বাধীনতা।
৪. দিবারাত্র হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর বাড়ি ফিরে ক্ষুধার্ত পরিবারের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারাটাও স্বাধীনতা।
৫. প্রেমিক / প্রেমিকা / স্বামী / স্ত্রী… একে অপরকে দমিয়ে রাখার প্রবণতা। সহ্য করতে না পেরে break up বা divorce দিতে পারাটাও স্বাধীনতা।
৬. বাবা- মায়ের নজরদারি থেকে বেরিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখা, খাওয়া দাওয়া, ঘুরতে যাওয়া… এগুলোও স্বাধীনতা।
৭. সকালে ঘুম ভেঙ্গেই মনটা কেমন ভারী। কিছু কাজ করতে ইচ্ছে করছে না।
“আজ আর রান্না করতে পারব না”…. বলতে পারাটাও স্বাধীনতা।
৮. শ্বশুরবাড়ীতে সবার ভিড়ে স্বামী / স্ত্রী র আলাদাভাবে তেমন করে চেনা হয়ে ওঠে নি দুজনের দুজনকে। শুধুমাত্র দুজনে দিনকয়েকের জন্য বাইরে ঘুরতে যেতে পাওয়া….. এটাও স্বাধীনতা।
৯. ছেলেমেয়েগুলো সারাদিন ব্যাগ পিঠে করে দৌড়াচ্ছে… স্কুল- টিউশানি- আঁকা- গান- নাচ আরো কত কি।
যেদিন ইচ্ছে হল না, মন ছুটি চাইল আর বলল— “আজ কিছু করতে ভালো লাগছে না। আজ ছুটি নিলাম।”…… এটাও স্বাধীনতা।
১০. সর্বোপরি সমাজে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করলাম, কোন মানুষকে সেবা করলাম, অসহায় -দুঃস্থদের সাহায্য করলাম আর পুরোটাই নিজের মতো করে নিজের প্রচেষ্টায় করলাম… এটাও একটা স্বাধীনতা।
সবশেষে বলি… ব্যক্তিসমষ্টিই রাষ্ট্র তৈরী করে।আমরা ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকেই যদি সমমনোভাবাপন্ন হয়ে এগিয়ে আসি তাহলে বোধহয় আমরা আরো উন্নত সমাজ গঠন করতে পারি।
আত্মসম্মান, আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার নামই তো স্বাধীনতা।
আসুন আমরা সবাই হাতে হাত মিলিয়ে আমাদের দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।