আজ মে মাসের তিন তারিখ। সোমবার।রাত কেটে গিয়ে প্রায় কাক ডাকা ভোর ভোর হয়ে আসছে। “এবার বেরিয়ে পড়বো” ভাবতে ভাবতে একটু করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছি।
জানালার কার্নিশ ঘেঁষে জিরিয়ে নেয়া আমার বরাবরের অভ্যেস।আসলে একমাত্র জানালা দিয়েই বাইরে পা রাখা যায় নির্দ্বিধায়। দৈর্ঘ্যে প্রস্থে উচ্চতায় দরজা অনেক বড় তবু জানালার মাহাত্ম্য, জানালার উপকারীতা লিখে রাখি পৃষ্ঠাভর।
জানালার অতিরিক্ত অংশটা বিদায়ী ঘট নিয়ে নিঃস্ব প্রজাপতির ডানায় নিজের ওজন ফেলে রেখে উড়ে যেতে পারে যেকোনো আপ-ডাউন ট্রেনের বাতিল কম্পার্টমেন্টে। একতলার বড়ঘরের জানালায় বসার পরই গায়ে এসে পড়ে কয়েকটা লোহার শিক আর ভীড় কামরার হকারজবানী।আয়ুর্বেদিক মালিশের তেল বা এক টাকায় দশটা পেনের মতো কিছু শব্দও ভেসে আসে আলপটকা।
অনেকটা দূরে একটা বটগাছ সটান শরীরে দাঁড়িয়ে থাকে রোজ, এই যে প্রতিদিন এতো পাতা পড়ে, কে কুড়োয়? ফলগুলো খায় কারা?আমি পাশেই একটা ছোট প্রাইমারি স্কুল দেখি।মনোরমা বিদ্যাপীঠ।রঙ্গলাল মাস্টার, কবিতা দিদিমনি, নামতার সুর…সবকিছু মিশিয়ে শীতের দুপুরের আচার হয়ে যায়।বটগাছটার কত বছর বয়স কেউ জানে না, এলাকার প্রাচীন মানুষদের জিজ্ঞেস করি, উত্তর চব্বিশ পরগণা ছাড়া তারা কিছুই বলতে পারেন না নির্দিষ্ট করে। বটগাছের গোড়া থেকে একটু ওপরে একটা ঢিবি মতো জায়গায় ইয়্যা বড় শিবলিঙ্গ। রুনুপিসি প্রতিদিন জল ঢালে, “বাবার বার” বলে আলাদা কোনো বৈষম্য নেই তার, তার মেয়ে টুসি পড়াশুনোয় একেবারে ঊর্ধ্বমুখী, হয়তো সেইজন্যই তার এহেন শিবপ্রীতি। আমি কাওকে কিচ্ছু বলি না। চুপচাপ বসে থাকি। শিবের মাথায় ওই ছোট্ট ছোট্ট লাল রঙের বিফল বটফলগুলো ছুঁড়ি।
মাঝেমধ্যে শিবের মাথায় খুব করে জল ঢেলে দিতে ইচ্ছে করে শীতকালে , ইচ্ছে করে কাচের যে শিশিতে আমাদের আলুসেদ্ধভাত খাবার কাঁচাতেল থাকে সেই তেল দিয়ে ওই ব্যাটাকে ভালো করে মালিশ করি, আপ শিয়ালদা’র লেডিসে যে লোকটা রোজ মালিশের তেল বিক্রি করেন তার মালিকানা কী এই বুড়ো শিবের গায়ের চর্বি কিনা জিজ্ঞেস করবো ভাবতে ভাবতেই পরবর্তী স্টেশন এসে যায়।
যখন প্ল্যাটফর্মে নেমে পরের লাইভে পৌঁছোই হাঁপাতে হাঁপাতে, ততক্ষণে দেখি পিঠের ওপর একটা আস্ত বিদ্যালয় আর সেখানে রঙ্গলাল মুখোপাধ্যায় পড়াচ্ছেন শূন্য ঘরের নামতা।
আমি পিয়াংকী। এতক্ষণ “স্টেশন থেকে সরাসরি” ছিলাম আপনাদের সাথে।
এবার আপের ট্রেনে উঠব।পরবর্তী স্টেশনে আবার অন্যকেউ অন্যকিছু…