মার্গে অনন্য সম্মান প্রশান্ত কুমার শীল (সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

পাক্ষিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ৩০
বিষয় – সততার মূল্য

দায়িত্ব

তপনবাবু অবসর নিয়েছেন বছর দুয়েক হলো।সারা জীবন তিনি শুধু কর্তব্য পালন করে এসেছেন সবার প্রতি অতি নিষ্ঠা সহকারে। বাবা মা যতদিন বেঁচে ছিলেন, তাঁদের প্রতি কর্তব্য পরায়নে এতটুকু ফাঁক রাখেন নি। বাবা মা ছেলের এই দায়িত্ব পালনে খুব খুশি হয়েছিলেন। দুহাত ভরে আশীর্বাদ করে গেছেন তারা তপনবাবুকে।
তারপর নিজের স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট সচেতনতার দৃষ্টান্ত রেখেছেন। কখনও তাকে কোন অভাব বুঝতে দেননি। যদিও স্ত্রী রূপাদেবী কখনও কোন কিছু দাবী বা আবদার করেননি। খুব সুন্দর ভাবে তিনিও স্বামীর প্রতি কর্তব্য পালন করে এসেছেন। তাই বুঝি সুখ পাখি বাসা বেঁধেছিল তাঁদের ঘরে।
তপনবাবুর একছেলে এক মেয়ে। বছর চারেক আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন খুব ভালো পাত্রের সাথে। পাত্র হাই স্কুলের শিক্ষক। সেখানেও তপনবাবু নিষ্ঠা সহকারে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছেলে মেয়েকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে প্রকৃত শিক্ষিত করতে পেরেছেন। ছেলে বছর পাঁচেক আগে ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েছে। এবার একটা ভালো পাত্রী দেখে ছেলের বিয়ে দিতে পারলেই তপনবাবুর দায়িত্ব মোটামুটি শেষ।
সেদিনদ সন্ধ্যাবেলায় ছেলে প্রদীপ এসে বাবাকে বলল, বাবা তুমি জানো আজ একটা বিশেষ দিন । তপনবাবু কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, বিশেষ দিন? কোন পুজো টুজো আছে বলে তো মনে পরছে না। কী বিশেষ দিন? আমি তো ঠিক মনে করতে পারছি না। ছেলে তখন বাবাকে বলল, তুমি কিছুটা ঠিক ধরতে পেরেছ বাবা, বলতে পারো পূজোই। বাবা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন ছেলের দিকে। কী পূজোরে খোকা? তোর মা-ও তো আমাকে কিছু বলল না এ ব্যাপারে। ছেলে বাবাকে থামিয়ে বলল, মা-ও জানেনা। আসলে আজ হলো ফাদার্স ডে। তপনবাবু একটু হেসে ছেলেকে বললেন, ও এই কথা। আমাদের সময় এসব ফাদার্স ডে, মাদার্স ডে ছিল না। এখন তো প্রতিদিনই কিছু না কিছু ডে পালন করা হয়। ছেলে বাবাকে প্রণাম করে বলল, বাবা আমি মনেকরি বাবা মায়েদের জন্য কোন দিন হয় না। আমার কাছে প্রতিদিনই ফাদার্স ডে ও মাদার্স ডে। তাই আজ আমি তোমাদের দুজনকেই আমার সামনে বসিয়ে আমার মনের মতো করে পূজো করব। তোমাদের কোন আপত্তি আজ আমি শুনব না। তপনবাবু কিছুক্ষণ ছেলের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে মনে মনে ভাবলেন, নাঃ আমি বোধহয় আমার সংসারের প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি। সারাজীবন সৎভাবে থেকে ছেলে মেয়েদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে প্রকৃত মানুষ করতে পেরেছি। এইতো আমার সততার পুরস্কার।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।