অণুগল্পে পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি

জাতের নামে বজ্জাতি

ব্রিটিশ আমলের কথা। দক্ষিণ ভারতের মালাবার উপকূলে পালঘাটে চিঠি বিলি করতে গেছে এক পোস্টম্যান। নিম্নজাতের কপিলেশ ঢুকে পড়েছে উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ এলাকায়। কপিলেশকে দেখেই চিনতে পেরেছে এক ব্রাহ্মণ বালক। মুহূর্তে খবর ছড়িয়ে পড়ে ব্রাহ্মণ মহল্লায়। লাঠিসোটা হাতে বেরিয়ে আসে ব্রাহ্মণ যুবকেরা। কোন রকমে কপিলেশ পালিয়ে বাঁচে। কিন্তু, ঘটনা এইখানেই শেষ হয় না। পাশের নিম্নজাতের এলাকায় সংঘর্ষ করতে এগিয়ে যায় ব্রাহ্মণ যুবকদল। কপিলেশ তাড়াতাড়ি ফিরে আসে ডাকঘরে। সঙ্গে সঙ্গে পোস্ট মাস্টার লোক মারফৎ খবর পাঠায় থানায়। পুলিশ এলেও ব্রাহ্মণদের রোষ কমে না। দাঙ্গা বেঁধে যাওয়ার উপক্রম।

জেলার কালেক্টরের অনুরোধে পোস্ট মাস্টার জেনারেল ঘটনাস্থলে ছুটে যান। বোঝাতে থাকেন যে কপিলেশ অফিসের কাজে ব্রাহ্মণ এলাকায় গেছে। কিছুতেই উত্তেজনা থামে না। বয়স্ক ব্রাহ্মণেরা দাবী করতে থাকে পোস্ট মাস্টার জেনারেলকে হয় জরিমানা দিতে হবে বা এক হাজার ভিক্ষুককে ভোজন করাতে হবে। উচ্চবর্ণের এই রীতি। ইতিমধ্যে সরকারী চাকুরে এক ব্রাহ্মণ যুবকের সাথে পোস্ট মাস্টার জেনারেলের কথা শুরু হয়। তিনি তাকে বোঝাতে সক্ষম হন যে তিনি ইংল্যান্ড থেকে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে চাকরি করতে এসেছেন দেশে স্ত্রী আর পুত্রকে রেখে। যুবকের করুণা হয়। কিন্তু, সে কি পারবে বয়স্কদের বোঝাতে? অনেক চিন্তার পর মাথায় এক বুদ্ধি খেলে গেল তার। সে ধীরে ধীরে এক বয়স্ক ব্রাহ্মণের কাছে গিয়ে বললো, “সাহেব বলেছেন যে আমাদের এলাকায় একটা শাখা পোস্ট অফিস তৈরি হবে আর সেখানে শুধু ব্রাহ্মণরা চাকরি করবে।” এবার বয়স্ক ব্রাহ্মণদের মিটিং চললো। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যে সাহেবকে ছেড়ে দেওয়া হোক।

কয়েকদিন পরে ব্রাহ্মণ যুবক এসে খবর দিল যে সাহেব বদলি হয়ে গেছেন। আর পোস্ট অফিসের দেয়ালে উচ্চবর্ণের মানুষের জন্য একটা পৃথক ডাক বাক্স রাখা আছে। এলাকার কাউকে গিয়ে রোজ চিঠি নিয়ে আসতে হবে।

আরো করো জাতের নামে বজ্জাতি…..!

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!