অণুগল্পে পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি

নিরাপত্তা
শান্ত হাত মুখ ধুয়ে শোবার ঘরের বিছানার উপর থেকে ব্যাগটি কাঁধে তুলে নিয়ে দরজার দিকে এগলো। পিছন পিছন সীমাও এল দরজা খুলে দিতে। দরজা খুলতে গিয়েই বাঁ দিকের পাল্লাটা প্রায় খুলেই পড়লো। শান্ত ধরে পাশে বারান্দার দেয়ালের পাশে হেলান দিয়ে রাখলো। অফিসে যাওয়ার পথে এই আচমকা বিপত্তিতে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। কাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার পই পই করে বলছেন, আজ যেতেই হবে। পারলে একটু তাড়াতাড়ি।
মাত্র ছয় মাস হলো ভাড়া বাড়িতে এসেছে শান্তরা, পৈতৃক যৌথ পরিবারের বাড়ি ছেড়ে। তারপরই বাবাই তিন মাস হলো নার্সারিতে ভর্তি হয়েছে। একটু পরে ওর স্কুলে যেতে হবে। বাবাই বাবার সাথেই খেয়ে নেয়। সীমাও তৈরি হয়ে আছে। এই সময়ই কিনা….
দিন সাতেক হলো দরজার বাঁ দিকের ফ্রেমে উই পোকার বাসা দেখেছে সীমা। শান্তকে বলেওছে। ও তো অফিস আর বাজার ছাড়া কোন কাজই করে না। অফিস নিয়েই সমস্ত ব্যস্ততা। ভাড়া বাড়িতে থাকার সহবৎ ওরা আয়ত্ব করতে পারেনি এখনো। বাড়িওয়ালাকে জানিয়েই খালাস। বাড়িওয়ালার দেরি দেখে নিজেরাই তো বেগন স্প্রে বা অন্য কোন ওষুধ দিতে পারতো। তাহলে এই বিপত্তি হয়তো আটকানো যেতো।
বাড়িওয়ালাকে ফোন করে শান্ত অফিসের পথে বেরিয়ে গেল। বাড়িওয়ালা বললেন যে কাঠমিস্ত্রি ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে এসে যাবে। কোন রকমে দরজার পাল্লাটা ঠেস দিয়ে লাগিয়ে সীমা বাবাইকে রেডি করে দিল। রিক্সার হর্ন শোনা যেতেই সীমা বাবাইকে রিক্সায় তুলে দিতে দিতে বয়স্ক রিক্সাওয়ালা রতনকে বললো, “ওকে স্কুলের গেট দিয়ে ঢুকিয়ে দেবেন।” অন্য দিন সীমা নিজে বাবাইয়ের সঙ্গে যায়। এই ভাবে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়লো সীমা।
তারপর বাইরের ঘরে দরজার দিকে তাকিয়ে ঠায় বসে রইল সীমা, মিস্ত্রির অপেক্ষায়। ভাবতে থাকলো শান্ত তার চাকরির নিরাপত্তাকেই প্রাধান্য দিলো। নিজের স্ত্রী- পুত্রের নিরাপত্তা গৌণ হয়ে গেলো তার কাছে। সীমা যেন আজ জীবনকে নতুন করে চিনলো।