সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ৫)

স্ট্যাটাস হইতে সাবধান

হজা মোটে রিস্ক নিতে রাজী না। রাজেশকে ঠেক থেকে তুলে শিয়ালদার বাসে তুলে দিয়ে ফের সতর্ক করে দিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে ওঠে, – তিনদিনে কিন্তু ম্যানেজ করতে পারবো না মাইরি, অন্ততপক্ষে হপ্তাখানেক ডুব দিয়ে দিস রাজেশ, কাউন্সিলর মালটাকে তো চিনিস, শালা একের নম্বরের হারামখোর, ওকে ম্যানেজ করতে হয় টাকা নয়তো মদ কিছু তো একটা সাপ্লাই দিতে হবে। — থালে পরে কি হবে হজাদাদা? মাসের তো সবে দু হপ্তা হলো, এখন অতো টাকা আমি — কঁকিয়ে ওঠে রাজেশ। — আরে ধুস, ওসব আমি ভেবে নেবো রে, তোর জন্য এটুকু করতে পারবো না?
ফেরার জন্য রিক্সা ধরে নেয়। নিজের বুদ্ধির তারিফ নিজেই করে রিক্সায় বসে অভ্যাসমতো জোরে একটা সিটি বাজিয়ে দেয়।
— কী বুদ্ধি মাইরি আমার! এবারে শালা ওই খেন্তিটাকে মধ্যমগ্রাম পাঠাতে পারলে — উফ্, বলে কিনা রিক্সা চালাতে পারি না। দেখ, তোর ট্রাক যদি…

রিক্সা থেকে নেমেই হজা আর দেরী করে না। খেন্তির দরমার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাঁক মারতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়। নাহ্, রাতের বেলা চিৎকার করলে পাড়ার লোকেরা জড়ো হয়ে যাবে। তখন একথা ওকথা সেকথায় সব প্লান ভেস্তে যেতে সময় নেবে না। আবার ফিসফিস করে ডাকলেও মুশকিল। খেন্তিটা যদি চেঁচিয়ে উঠে পাড়া মাথায় করে? এসব মালগুলোকে কখনও বিশ্বাস করতে আছে? এমন সময় মুশকিলআসানের মতো ঘরের ঝাঁপ খুলে খেন্তিই বেড়িয়ে এলো।
— কে গো হজাদা না? তা রাতের বেলায় আমাদের ঘরের সামনে? কিছু বলবে?
— হ্যাঁ গো খেন্তিদি, বিশেষ কারণে আসতে হলো বুঝলে, পাড়ার কাউন্সিলর, আরে সুবল শর্মা গো, বিকেলবেলা ডেকে পাঠালো। তা তুমি যে কুকুরগুলোকে খাওয়াও সেগুলোর ভেতর দুটো কুত্তা নাকি পাশের ওয়ার্ডের ড্রেনে মুখ ভেটকে পড়ে ছিলো। মুখের কষ বেয়ে ফেনাটেনা উঠে, গাঁজলা তুলে, সে এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা। পাশের পাড়ার কাউন্সিলর তারাপদবাবু নাকি রাজেশের নামে নালিশ ঠুকেছে থানায়।
— কী বলো কি গো হজাদা, সবকটা কুকুরই তো সন্দ্যেবেলা এসে বিস্কুট খেয়ে গেলো, মরলো আবার কখন?
— তাহলে তার পরেই হবে। আমি তো সেসব কথা শুনে মালের ঠেকে গিয়ে রাজেশকে টাকাপয়সা দিয়ে ওকে মধ্যমগ্রাম পাঠিয়ে দিয়ে এলাম। তা তোর কাছে মধ্যমগ্রাম যাওয়ার জন্য টাকাপয়সা আছে কিছু?
— মধ্যমগ্রাম? মানে মালখোড়টা আমার মাসি বাড়ি গেছে মরতে? তা মরুক গে যাক, কটা দিন একটু হাড়ে বাতাস দেওয়া যাবে। তুমি যে আমার কী উপকার করেছো গো হজাদা, কী আর বলবো? আগেরজন্মে তুমি শিওর আমার নিজের মায়ের পেটের দাদা ছিলে গো। কটা দিন রাতে কিল, ঘুষি, লাথি না খেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোনো যাবে।
— কিন্তু পুলিশ এসে রাজেশকে না পেয়ে যদি তোকে তুলে নিয়ে যায় তো? তালেপরে কী হবে?
— মজাই তো হবে গো, কটাদিন পুলিশগুলোর সাথে একটু ফষ্টিনষ্টি করে কাটানো যাবে, আর সাথে বিনি পয়সায় খাওয়ারটাও জুটে যাবে। শুদু কুকুরগুলোর যা একটু কষ্ট। তা বলি কী, আমাকে মাসিবাড়ী পাঠাতে তুমি যে টাকাগুলো দিতে, সে টাকায় না হয়, তুমি এ কদিন কুকুরগুলোকে খাইও।
এখন ঘরে যাও গো হজাদাদা, রান্নাবাড়া বাকী পড়ে আচে।

হজা হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ খেন্তির বন্ধ দরজার সামনে, মনেমনে একটা খিস্তি দিয়ে উঠলো খেন্তিকে। নাহ্, এজন্যই বলে নীচুজাতের উপকার করতে নেই। বড় রাস্তায় এসে একটা সিগারেট ধরালো হজা। ওর সামনে দিয়ে একটা ট্রাক আর উলটোদিক দিয়ে একটা রিক্সা প্যাঁক প্যাঁক করে হর্ণ বাজাতে বাজাতে ওকে প্যাঁক দিয়ে চলে যাচ্ছে। হঠাৎই রিক্সাওয়ালাটার দিকে চিৎকার করে একটা খিস্তি ছুঁড়ে মারলো হজা।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।