সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ১৬)

পদাতিক

ভাগ্যলক্ষ্মী অপেক্ষায় থাকেন। অপেক্ষায় থাকে বিজয় তিলক। যিনি সে তিলকের বিজয়মুকুট মাথায় পড়বেন, তিনি কিন্তু অপেক্ষায় থাকেন না, তিনি অনলসভাবে এগিয়ে চলেন এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আরেক যুদ্ধক্ষেত্রে। কণ্টকাকীর্ণ সময়কে জয় করতে করতে ছিনিয়ে নেন তার সৌভাগ্যলক্ষ্মীর আশীর্বাদ। বলরামবাবু যখন সমস্তরকম প্রতিকুলতাকে অস্বীকার করে চোয়াল চেপে এগিয়ে চলেছেন তার অভীপ্সিত যাত্রাপথে, ঠিক সেই সময়েই সবার অলক্ষ্যে ভাগ্যদেবী গাঁথতে বসলেন তার জয়মাল্য। আনন্দবাজার পত্রিকার একজন সাংবাদিক, যার ওপর দায়িত্ব ছিলো তৎকালীন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার সংবাদ সংগ্রহ করার, তিনি বলরামবাবুর এই অভূতপূর্ব উদ্যোগের খবর পেলেন। খবর পেলেন কীভাবে একজন গ্রাম্য যুবক, তার সর্বস্ব বাজী রেখেছেন, এক অসম্ভবকে সম্ভব করার অদম্য জেদের কাছে। যে সমস্ত শিশুরা, যাদের নিজেদের অদৃষ্টক্রমে জন্মমুহূর্ত থেকেই পিতৃমাতৃহীন অসহায়, অথবা পিতৃপরিচয়হীন কোনো অভাগিনী মায়ের কোল আলো করে জন্ম নিয়েছে, অথবা জন্মক্ষণেই হারিয়েছে তার মাতৃবক্ষসুধার স্বাদু অমৃতের অধিকার, সেইসব অভাজন শিশুদের কাছে ভালোবাসার, নির্ভরতার আলো পৌঁছে দেওয়ার, পিতৃত্বের ভরসা, মাতৃত্বের নির্ভরতাকে ভালোবাসার অমল আলোয় মুড়ে দেওয়ার মানবিক আন্দোলনের কাণ্ডারি হওয়ার দৃঢ় পদক্ষেপে একবুক সাহস আর দুচোখ ভরা স্বপ্নকে সাথী করে এগিয়ে চলেছেন, তার সংবাদ।

আনন্দবাজার পত্রিকা কলকাতা সংস্করণ আর আনন্দবাজার পত্রিকার বিদেশ সংস্করণে সেই সাংবাদিকের পাঠানো প্রতিবেদনে উঠে এলো সেই ছবি, সেই অসমসাহসী যুবকের লড়াইয়ের বৃত্তান্ত, তার স্বপ্নের ছবি, যে স্বপ্ন কল্পজগৎ থেকে ছিনিয়ে আনতে সর্বস্বপণ করেছে তার খবর। এক প্রান্তিক, অজ পাড়াগাঁয়ের বাসিন্দা একজন যুবক কীভাবে কিছু আর্ত, অনাথ শিশুর জীবনকে ক্রমশ আলোয় ভরিয়ে তোলার জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ করছেন তার সংবাদ চার কলাম জুড়ে ছবিসহ প্রকাশিত হলো।
সেই যে বলছিলাম, যিনি কাঁটার মুকুটকে হাসিমুখে গ্রহণ করেন, ভাগ্যদেবী সেই কাঁটার মুকুটকে বিজয় মুকুট করে তার মাথায় পড়িয়ে দেন।
আনন্দবাজার পত্রিকা খবর করলো, যে পাঁউশির এক অনাথ আশ্রমের জন্য যুবক বলরাম, কীভাবে গ্রামের ঘরে ঘরে লক্ষ্মীর ভান্ডার রেখে সংগ্রহ করছে অনাথাশ্রমের শিশুদের ভরণপোষণের খাদ্যদ্রব্য।

সাংবাদিক সুব্রত গুহর কলমের জন্যই যেন অপেক্ষায় ছিলো এক কালজয়ী যুদ্ধের ফলাফল ঘোষণা। সুব্রতবাবুর এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই লড়াইয়ের ফলাফল ঘোষিত হলো। রাতের অন্ধকারের বুক চিরে সৌভাগ্যের সূর্যালোক তার ঝলক নিয়ে প্রকাশিত হলো। দেশ বিদেশ থেকে একে একে শুভানুধ্যায়ী মানুষেরা এগিয়ে আসতে শুরু করলেন তাদের দুহাতভরা শুভেচ্ছা নিয়ে।

ক্রমশ

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।