সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ১২)

স্ট্যাটাস হইতে সাবধান

ইলেক্ট্রিক ক্যাটলটা প্লাগে লাগানো রয়েছে, অথচ ক্যাটলটা মাঝেতে, সারাটা মেঝে জলে ভেসে যাচ্ছে, দুধের পাত্রটা থেকে সবটুকু দুধ মেঝেতে গড়িয়ে পড়ে সাদা নদীর মতো বয়ে যাচ্ছে, আর সেই নদীর ভেতর ছড়ানো রয়েছে ছহাজার টাকা কেজির কৌটো ভর্তি দার্জিলিং চা। আর মিষ্টার তলাপাত্র! ওর দিকে তাকিয়েই ফুলটুসির বুকের ভেতরটা ধরাস ধরাস করা শুরু করে দিলো। হাতপা চারদিকে ছড়িয়ে চোখমুখ নিথর করে সিলিংএর দিকে তাকিয়ে আছেন তলাপাত্র।
হায় হায় — বেচারা মরেই গেলো নাকি? কী করবে ফুলটুসি এখন? ভয়ে ওর হাতপা কাঁপছে। প্রাণপণে চিৎকার করতে চেষ্টা করলো ফুলু, কিন্তু গলা থেকে চড়াইপাখির থেকেও কম আওয়াজ বেরোচ্ছে। ও দৌড়ে ব্যালকনিতে গেলো। গ্রীলের ফাঁক থেকে কোনোক্রমে চিৎকার করে উঠলো — হেল্প হেল্প —

ঠিক সেসময়েই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো সুমন। পাড়ার ভেতর একমাত্র কোয়ার্টার প্রতিষ্টিত কবি। নন্দন চত্বরে তার নিত্য যাতায়াত। হাঁটু পর্যন্ত লম্বা পাঞ্জাবি, কাঁধে ঝোলা, সুমনকে চেনেন না, অথচ নন্দন চত্বরে তার পায়ের ছাপ পড়েছে, এরকম মানুষ বিরল। নব্যা কবিত্রিদের সুমনের সেলফি নেই এরকমটা ভাবাও মুর্খামি। অথচ একই পাড়ায় থাকলেও সুমন আর ফুলটুসি কারো সাথে কারো পরিচয় নেই।
ফুলটুসির চিৎকার শুনে সুমন তরতর করে সিঁড়ি ভেঙে বন্ধ দরজায় ঘা দিলো। অথচ ব্যালকনিতে থাকার ফলে ফুলটুসির কানে গিয়ে পৌঁছুলো না। শেষে সুমন কলিংবেলটাকে চেপে ধরে রইলো।
ফুলটুসির সাথে সুমন যখন রান্নাঘরে এসে দাঁড়ালো, ততোক্ষণে মিস্টার তলাপাত্র অনেকটা সামলে উঠেছেন। দুধ আর জলের ভেতর দুপা ছড়িয়ে বসে আছেন তিনি।
— কি হয়েছিলো আপনার স্যার?
স্যার শব্দটা শুনে ফুলটুসির গা পিত্তি জ্বলে গেলো।
— শক। কারেন্ট। চা…
শুধুমাত্র এ কটা কথা বলে মিস্টার তলাপাত্র ফের ধপাস করে মেঝের ভেতর শুয়ে পড়লেন।
ওদিকে বরুণ ওর কমেন্টের উত্তর না পেয়ে রেগেমেগে হয়তো অন্য কোনো লেডিলাভের কাছে চলে গেছে।

ক্রমশ…

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!