সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ১৪)

বাউল রাজা

তৃতীয় খন্ড (চতুর্দশ পর্ব)

সমস্বরে রাধাকৃষ্ণের নামবন্দনায় কেন জানিনা আমার বুকে কাঁপন লাগলো। এ কাঁপন ভয়ের বা মান খোয়ানোর নয়, এ কাঁপন এক অজানা আনন্দের। আমি বাউলদাদার পুরুষ অঙ্গে রাধাভাব দেখেছি। আমার কেমন যেন মনে হতে লাগলো আজ এই পূণ্যক্ষেত্রে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই রাসলীলা অবলোকিত হবে। আজ কানাই বাউল তার শ্রী অঙ্গে যে ভূষণে সেজেছেন এখন শুধু হাতে একটা শ্রীবাঁশরীর প্রয়োজন। আর বাউলদিদিও কেন জানিনা মনে হলো এখুনি রাধাভাবে বিভোর হবেন। তাহলে কী আমাকে এখন সুতো ধরিয়ে দেওয়ার কাজটা করতে হবে? আমার পঞ্চম ইন্দ্রিয় কেন জানিনা সজাগ হয়ে উঠেছে। সবেমাত্র সন্ধ্যা হয়েছে। গাছেগাছালি পাখিদের কলকাকলিতে মুখর। বাউলনি উঠে মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে আর ওদিকে এক অপূর্ব শিশুসুলভ হাসির ছটায় বাউলের গণ্ডদেশ রক্তিমাভায় ছেয়ে গেছে।

আমি এগিয়ে এসে বাউলনিকে ধীরেধীরে তুলে ধরলাম। কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম — ওগো শ্রীরাধিকে, তোমার কৃষ্ণঠাকুর তো তাঁর মনযাপিত বাঁশীর সুরে শ্মশানে আগুন ধরিয়ে দিলো গো! শিগগির বাড়ি চলো। সেখানেই আজ কানাইদা শরীরের খোলস ছেড়ে শ্রীরাধিকে রূপ নেবেন মনে হচ্ছে।

আর বাড়ি যাওয়া, গাছপাকা ফলের মতো কানাইদা যেন পেকে, ফেটে বসে আছেন। অন্তরস্থ রস যেন ফেটে যাওয়া অংশ বেয়ে টপটপ করে আপনা আপনিই ঝরে পড়ছে। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা টেনে উপস্থিত সবাইকে ডেকে নিয়ে বলে উঠলেন —
চলেন কেনে গো সব ভদ্রমানুষেরা, পদীপদাদা আজ আমার রাদাভাব দেকপে বলে মনে লিয়েচে। পদীপদার মনোবাঞ্ছা পূরণ হোক।
চল কেনেরে কিষ্ণামা দেকি কেমন বাঁশী বাজাতে পারিস আজ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।