সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ২১)

বাউল রাজা

তৃতীয় খণ্ড (একবিংশ পর্ব)

তুমি আর নতুন করে মরবে কী ঠাকুর, তুমি তো মরেই রয়েচো।
মিত্যুর আরেক রূপ যে সমপ্পন গো। তুমি যকনই নিজেরে অন্যের হিদয়ে সঁপে দিলে তকুনি তো তোমার মরণ হয়ে গেলো। বালোবাসার পথম শত্তই তো হলো নিজেরে নিজে অন্যের কাচে ধরে দেওয়া গো ঠাকুর।

কথাগুলো নদী বলছে নাকি বাউলনি সেটা বুঝতে পারছি না। ধারেকাছে কোথাও সে নেই অথচ তার কথা আছে। নদী ফের খিলখিল করে হেসে উঠলো।
— তুমি বিথাই ফুলের গন্দ শুঁকে ফুলেরে ধরতে চাও ঠাকুর।
— মানে? আমি আমার অবচেতনেই যেন জিজ্ঞাসা করে বসলাম।
— ফুল যকুনি তার বুকের গন্দরে পেমভরে বাতাসরে সমপ্পন করেচে, তকুনি তো সে আর ফুল রইলো না গো, সে তকন শুদুই সুগন্দের পেরক, আর তার পেমিক বাতাস সেই সুগন্দের বাহক। তুমি যে গলার স্বর শুনলে সে তোমার সামনে থাকলেই কী আর না থাকলেই বা কী? সে তার সুগন্দী শব্দরে বাতাসের বুকে ভাসিয়ে দিয়েচে গো।
এ এক জটিল ব্যাখ্যা।

কি গো ঠাকুর কতাগুলো কি শক্ত মনে নিচ্চে?
আমি আর কিইবা বলি? একবার মনে হচ্ছে আসলে সব কথাগুলো বুঝি আমারই নিজের কাছে নিজের বলা কথা, ঠিক তক্ষুনি ফের মনে হচ্ছে, আমার কীভাবে হবে? আমি কি সত্যিই আর এতো গূঢ় কথা জানতাম আদৌ? এ আমার কথা নয়, তবে কথাগুলো কার? একটা নদী কীভাবে কথা বলবে? এ পুরী যতই মায়াপুরী হোক না কেন, এ অসম্ভব ঘটনাগুলোর কোনো বাস্তবতা আছে বলে বিশ্বাস করতে মন চায়না।
— দেকো ঠাকুর, তুমি যে মুহূত্তে সইকে বালবেসেচো, সেই মুহূত্তেই তুমি মারা গেচো। গোড়াতেই যদি নিজেরে নিজের কাচে এটুকু বুইজে না বুলতি পারো যে তুমি আর তুমি নেই, মানব সত্ত্বা তেকে পালটে গেচো পেমিক সত্ত্বায়, মানে তোমার আগের তুমির মরণ হয়েচে, তালেপরে বুজবে তুমি বালোবেসে উটতে পারো নি গো, তুমি তোমার পেমিক মনরে পেয়েও পাওনি, তারে ধরি ধরি মনে করি, ধরতে গিয়েও আর পেলেম না, ও ঠাকুর এবারে বুজেচো গো !
আমার কাঁধে কার হাতের স্পর্শে আমি চমকে উঠলুম। কৃষ্ণভামিনী আমার বাঁ পাশে বসে আমাকে কথাগুলো বলে আমায় ধাক্কা দিয়ে চৈতন্যে ফেরালো।

ক্রমশ…

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!