সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ২৫)

স্ট্যাটাস হইতে সাবধান
ধুত্তুরি, নিকুচি করেচে তোর কাগজের কাপ। ওদিকে মাটির ভাড়ে কফি খাওয়াতেই নিশ্চয়ই মকরমুখো হোৎকাটা রবীন্দ্রসদনের সেকেন্ড গেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছ মহিলাটির সাথে! মহিলাটিও কী ন্যাকা রে বাবা! কেমন ঢলে ঢলে কথা বলছে দেখো ঢলানিটা!
— কি গো কবিদিদিভাই, ধরবে তো কাপটা, কতক্ষণ এভাবে হাতে ধরে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো বলো দেখিনি? ওদিকে যে বলতে গেলে জীবনানন্দর অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো। তোমার নামটাও তো লিখিয়ে দিয়ে এসেছি। লিষ্টের প্রথম দিকেই তো আমাদের নাম লেখা আছে।
— ভাই সুব্রত, তুমি নাহয় একটা কাজ করো ভাই, হলে গিয়ে একটু অপেক্ষা করো প্লিজ, লিস্টে আমার নামটা আসার আগেই আমাকে একটা ফোন করে নিও কেমন? আর হ্যাঁ, শোনো, তোমার পাশেই আমার জন্য জায়গা রেখো কিন্তু, তুমি থাকলে আর কারো পাশে বসতে আমার একটুকুও ভালো লাগে না।
বিশেষ করে শেষের কথাগুলোতে ছেলেটি একেবারে গলে কাদাকাদা হয়ে গেলো।
— সে তো তুমি না বললেও রাখতাম গো সোনা দিদিটা। তুমি বোধহয় জানোনা, তুমি হলে আমার হট ফেভারিট। একেবারে সামনের সারিতে জায়গা রাখবো গো তোমার প্রয়োজনে।
ছেলেটি কোমড় দুলিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে, ফুলটুসির সেদিকে নজর নেই, ও একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে তলাপাত্র আর অচেনা মহিলাটির দিকে। ওরা নিশ্চয়ই হরিদার দোকানের দিকে যাচ্ছে।
মহিলাটি যেন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ফুলটুসি এখন কী করবে? মানে কি করা উচিৎ? ওদের কাছে গিয়ে কলার টেনে ধরবে ওই অনামুখোটার? মুখ করে অপমান করবে ওদের? নাকি জীবনানন্দের ঠান্ডা ঘরে গিয়ে শরীর এলিয়ে দিয়ে বসবে ওর ফ্যানের। ছেলেটিকে সামান্য একটু স্পর্শসুখের সুযোগ করে দেবে?
— ওমা গো! দেখেছো হোৎকাটার কী দুঃসাহস! রবীঠাকুরের মূর্তিটার নীচে গিয়ে দাঁড়িয়েছে পোজ দিয়ে। সেলফি তুলছে। হেসে হেসে কী যেন কথা বলছে দুজনে। দুজনে ঘন হয়ে দাঁড়িয়েছে, একজন আর একজনের মুখের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে? মনে মনে ভীষণভাবে রেগে যাচ্ছেন ফুলটুসি। শরীরটা ভালো লাগছে না।
জাহান্নামে যাক ওরা, ফুলটুসির তাতে কী আসে যায়? ফুলটুসিও ওর ইচ্ছেখুশীমতো করবে। মনে যা চায় সেটাই করবে।
হলঘরের দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে ঢুকলো সে। চারদিকে চোখ মেলে দেখে নিলো, খুঁজে নিলো ছেলেটাকে। বুদ্ধিমান খুব। গিয়ে নাহয় ।।।