সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ২০)

বাউল রাজা

তৃতীয় খণ্ড (বিংশ পর্ব)

কখনও কখনও এমনটা হয়, যে মনে মনে এরকমটা ভাবছি যে অমুকের সাথে অনেকদিন ধরে দেখা হয় নি। কথাও হয় নি কতোদিন হলো, ওর সাথে এবারে দেখা হলে গান শোনাতে বলবো অথবা গল্প করবো সারারাত ধরে। এমন সময়ে হঠাৎ কারো গলা খাঁকারির শব্দে তুমি চমকে উঠলে, দেখলে তুমি যার কথা ভাবছিলে এতোক্ষণ ধরে, সেই তিনিই এসে উপস্থিত হয়েছেন। এরকমটা হয় কি হয় না বলো দেখি? কোত্থেকে আমার অবচেতনে কানাইদা এসে যেন কথাগুলো বললেন।
আমি যেন এক আশ্চর্য যাদুপুরীতে এসে হাজির হয়েছি। এখানে নদীর বুকে করে পানসি নৌকোর মতো গান ভেসে বেড়ায়। সেও এমন গান, যে গানের বিষয় নিয়ে ঠিক তখুনি আপনমনে নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে চলেছি।
এতোদিন ধরে আমি জেনে এসেছিলাম যে, বাউল মানে সংসার ক্ষেত্রের বাইরে অথচ সমাজের বুকে বাস করা একটা গোষ্ঠীবদ্ধ বাউণ্ডুলে সমাজ, যারা তুলসী কণ্ঠিধারী, পরমতত্ত্ব ও দেহতত্ত্ব নিয়ে গান বেঁধে একটা নির্মোহ জীবন যাপন করেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যেও যে উচ্চকোটির সাধক আছেন, যারা নিজেদের মধ্যেই ঈশ্বরের অবস্থানকে প্রত্যক্ষ করেন, যারা একই অঙ্গে নারী ও পুরুষের সহাবস্থানে বিশ্বাসী অথচ সাধনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভিন্ন লিঙ্গের মানুষকে নির্বাচিত করেন অথচ সাধনক্ষেত্রে সাধারণত সঙ্গীর সাথে স্থুল কামে লিপ্ত হন না। এতসব আমার জীবনভোর অজানাই থাকতো, যদি না আমি ধ্রুবদার সঙ্গী হিসেবে এক ভাদ্র অমাবস্যার দিনে এই তারাপীঠের সাধনক্ষেত্রে এসে না পৌঁছুতাম।
— ” কীরে? তুই আবার আইসস? তরে না বারবার কইরা বারণ করসিলাম এইখানে আইতে? আমার কথা শুনস নাই তো, তাইলে তুই এইবারে মর। ”
ধ্রুবদার গলার আওয়াজে আমি চমকে উঠলাম। আর নদী ফের খিলখিল করে হেসে উঠলো।

ক্রমশ

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।