কথা শেষ হলো না ও হীলতোলা জুতোয় খটাখট আওয়াজ তুলে মেলার কৃত্রিম গলির বাঁ দিকে বেঁকে গেল।
কি রকম ব্যাপারখানা হলো? মালবিকা আমায় চিনতে পারলো না কেন? ওর চোখে রোদচশমা ছিল, তাই কি?
মাথা কাজ করলো না। আজকের মেলাটার আনন্দ মাঠেই মারা গেল!
মেলা থেকে বেড়িয়ে আসছি, দু তিনজন শাগরেদ বন্ধু নানান আওয়াজ তুলে ডাকলেও পিছন ঘুরে দেখলাম না, একরকম অগ্রাহ্য করেই বইমেলার বড় তোরণ অতিক্রম করলাম।
রাতে লিখতে বসেছি। মোবাইল বেজে উঠলো। একটা নম্বর ভেসে এল, নামবিহীন। রাত তখন ১২ টা ৪০ মিনিট। কি করবো? ধরবো? একটু দেরি করেই টুক করে ধরে নিলাম।
— হ্যালো
— হ্যালো – হ্যাঁ – আমি মালবিকা ….
আমি চমকে উঠলাম। নিজেকে গুছিয়ে বসলাম ,– হ্যাঁ – কি ব্যাপার বলো। তখন আমায় চিনতে পারলে না কেন?
— ওইটাই না। মেলা থেকে তোমার একটা বই কিনলাম। তাতেই তোমার নম্বর ছিল।
— ওরে বাবা? বই কিনলে? কিন্তু কেন?
— দেখলাম স্টলে তোমার বই, কিনে ফেললাম,দেখলাম পিছনে ফোন নম্বর আছে, কাজে লেগে গেল।
— বাঃ ভালো। কিন্তু আমার সঙ্গে কথা বললে না কেন?
— সঙ্গে স্বামী ছিল তাই।
— ওঃ – রাহুল ছিল?
–হ্যাঁ। ঠিকই ধরেছো। ওর ভীষণ সন্দেহ। আমাকে বিশ্বাসই করে না। শুধু আমায় কেন সকল মেয়েদের সন্দেহ করে। মেয়ে মাত্রই খারাপ -ওর কাছে।
— ওমা সেকি? তাহলে বিয়ে করেছে কেন?
— ওই যে দাসীবৃত্তি করানোর জন্য আর শরীরের খিদে মেটানোর দায়ে।
— সে কি? এই যুগে? আর তুমিই বা কি? নিজে আধুনিকা হয়ে এই নিয়ম মেনে নিয়েছো?
— তা কেন আমিও কি ধোওয়া তুলসী পাতা? তুমিতো ভালো জানো। সমীরের মত পুরুষের ভালোবাসার জন্য আমায় বিয়ের আগেও মা হতে হয়েছে?
— সেটা তো এক্সিডেন্টিয়াল!
— তা কেন আমি তো সেচ্ছায় ওকে আমার শরীর দিয়েছি, হ্যাঁ যদিও ভালোবাসার নামেই, তখন কি একবারও সতীত্ব কথাটার গুরুত্ব ভেবে দেখেছি?
— তা হোক সেটায় ভালোবাসা ছিল। কিন্তু এখানে তো ভালোবাসা বলে কিছু নেই , মনে হয় আছে শুধু দেওয়া – নেওয়া।
— একদম ঠিক বলেছো। এখন শুধুই নিরাপত্তার জন্য সম্পর্কে থাকা। আমার স্বামী একজন ধনী পুরুষ। আর আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মালিক নেই।
— কেন তোমাদের সন্তান -সন্ততি?
— না নেই। আমার যুবতী বয়সের সেচ্ছাছারিতায় তা নষ্ট হয়ে গেছিলো। স্বামী কিছু জানে না অবশ্য। ও জানে এটা ওর দোষ। সুবিধাটা কোথায় জানো? ছোটবেলা থেকেই ধনী ঘরের ছেলে ভালো -খারাপ অনেক মেয়ের সঙ্গেই রাত কাটিয়েছে।
— তা হলে তোমার দুঃখ অনেক কম ? তাই বলছো?
— তা ঠিকই বলেছো, একদম ঠিক কথা।
— সত্যি কথাটি তুমি স্বীকার করেছো। ভালো লাগলো – দেওয়া – নেওয়ার পলিসি জেনে। তোমাকে আমার খুবই দরকার ছিল, ভগবান তোমার দেখা পাইয়েও দিল, কিন্তু তুমি এড়িয়ে গেলে, এখন যখন ফোন করেছো তখন তোমায় বলে ফেলি — কি বলো?
— নিশ্চয়ই বলবে।
— তোমরা দত্তক নিতে পারো না? মানে এত যখন সম্পত্তি?
— হ্যাঁ। ভেবেছি এই ব্যাপারে। রাহুলেরও ইচ্ছা আছে।
— তবে একটা কাহিনী বলি। সমীর বিয়ে করেছিল।ওর একটা চার বছরের পুত্র সন্তান কে রেখে ওর স্ত্রী হঠাৎই ক্যানসার রোগে মারা যায়। অস্বাভাবিক ভাবে বর্তমানে সমীরও ওই রোগে ধরাশায়ী। ও ছেলেটাকে কোন আশ্রমে দিয়ে দিতে চাইছে।
— হোয়টস ইউ সে —
— ইয়েস আই জাস্ট সে ট্রু ……
আর কোন কথা নয়। আমি মোবাইলের লাইনটা কেটে দিলাম। ও আমাকে অবজ্ঞা করেছে, সত্যি কথা বলতে সমীর ওকে, ওদের এসে যাওয়া সন্তানকে মেনে নিতে চেয়েছিল, কিন্ত মালবিকাই ভালোবাসার নামে রুপবদল করেছিল। অথচ ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর পরিহাস? মালবিকা আজ বহাল তবিয়তে আর সমীর অসহায়!
তাই ফোন কেটে দিলাম। দরকার হলে, জ্বলেপুড়ে মরুক মালবিকা, ওর মন থাকলে ও আমাকে ঠিক খুঁজে নেবে।