Cafe কলামে পূর্বা দাস – ৬

প্রথম ভালোবাসা কবিতা। গল্প, রম্যরচনা,ভ্রমণকাহিনী তে ও স্বচ্ছন্দ। শ্রমনা, যুগসাগ্নিক, জনস্বার্থবার্তা ও আরো কিছু ছোট পত্রিকায় লেখালেখি। গত জানুয়ারি'২০ তে একটি অনুগল্প প্রকাশিত হয়েছে ' তথ্যকেন্দ্র ' পত্রিকায়। ফেব্রয়ারি থেকে Techtouchtalk এর সহযাত্রী। বর্তমানে মনিপুরী কিছু ছোট গল্প ও উপকথা অনুবাদে গভীরভাবে অভিনিবিষ্ট। দুহাজার সতেরো সালের মাঝামাঝি থেকে উনিশের মে মাস পর্যন্ত রাজস্থানে থাকার সুযোগ এসেছিল। ভয়ঙ্কর শুখা মরুভূমির রাজ্য রাজস্থান। শহরের বুকের ভেতরে বসে সেটা ততটা অনুভব করা যায় না। কিন্তু দু পা ফেললেই ছোট ছোট শিশিরবিন্দু ধরা পড়ে চোখে। এমনিতেই সাজপোশাক, আচার বিচারে বঙ্গ দেশের থেকে পার্থক্য এখানে অনেকটাই। তার উপর অসংখ্য উপজাতিদের মধ্যেও প্রকৃতিগত ফারাক প্রচুর। কিছু না। আমি শুধু জানালাটা একটু খুলে দিয়েছিলাম। হাওয়াটা ওপাশ থেকেই এসেছে। অনেকখানি।
ঘুরতে ঘুরতে আবু পাহাড়। পাহাড়ের চেয়ে জঙ্গল বেশী। জঙ্গলের চেয়ে tribes বেশী। Travor Tank এর গেটে রমেশ ভাইয়াকে পেলাম। ভীল সমাজের নেতা গোছের মানুষ। গাছ বাঁচায়, জানোয়ার বাঁচায়, মদের ঠেক ভাঙ্গে – বলে কি! নিজের জাতই তো একঘরে করবে গো তোমায়। সারাজীবন তোমরা জঙ্গল লুঠপাঠ করে এলে, আর এখন `মাছ খাব না, কাশী যাব’! দুঃখের হাসি হেসে বলল, ” আজ পাহাড়ে উৎসব, সময় একটুও নেই বহেনজী, নাহলে তোমায় তোমার চোখ দিয়েই দেখাতে পারতাম এই সবকিছু।”
– না, না, বল। বলতেই হবে।
– ঠিক আছে, তাহলে তুমিও কথা দাও, দুপুরে আমাদের উৎসবে আসবে। আমরা যা খাই, খাবে আমাদের সাথে। নাচ দেখবে।
আরিব্বাস! লাফাবো, উড়বো, না ডিগবাজি খাব ভেবে উঠতে না পেরে বললাম, “হবে, হবে আগে বল তো।”
– দিদি তুমি তো জানো, আমাদের ঘরের বাচ্চারা সরকারি স্কুলে যায় পড়তে। তো মাস্টারমশাইরা আবার সপ্তাহে না, মাসে কোন কোন দিন আসেন। যেসব স্কুলে রোজকার আনাগোনা, সেখানেও মিড-ডে-মিল আর একটু খেলাধুলা করে বাড়ি চলে যান তারা। বাচ্চারাও খুশি। কিন্তু দিদি, আর কতদিন বল তো এভাবে আমাদের মুখ লুকিয়ে বাঁচতে হবে? এখন তো জঙ্গলেও আর আশ্রয় মেলে না।
– তা তোমরা এর জন্য কোন চিঠি চাপাটি করো না?
– কাকে? কে শুনবে বলো? আমরা নিজেদের কথা নিজেরা বলি, নিজেরাই শুনি। তাই প্রাইভেট টিউশন দিয়েছি। দেড় হাজার টাকা মাসে মাস্টারকে দিই আমরা সবাই মিলে। এরকম মাত্র কয়েকজনই আছে যারা এই কটা টাকার জন্য আমাদের পাড়ায় আসতে সাহস পায়। আমাদের তো ডাকু, গুন্ডা এসবই ভাবো তোমরা।
আমি চিন্তায় পড়ি। এই পাঁচ ফুটিয়া রমেশ, ডাকু? হায় ভগবান!
– দিদি পাড়ায় পাড়ায় মদের ঠেক বানিয়ে দিচ্ছো তোমরা। আমি আমার সাকরেদদের নিয়ে গিয়ে ভাঙ্গি। আবার দু’চারদিনের মধ্যেই যে কে সেই। আমাদের ঘরের আট-দশ বছরের ছেলেগুলোকে ওরা সার্ভিস বয় বানায়। অভাবের জ্বালায় পাঠায়ও তো তাদের মা-বাবা। দিদি, কি করবো বলো, যে বাঁশের লাঠি দিয়ে ওদের মদের চালা ভাঙ্গি, মনে হয় সেই লাঠি ই নিজের কপালে ফাটাই। ছাড়ো এসব, আমাদের ঘুমর দেখবে না, আজ? এসেছই যখন, ছাড়ছি না মোটেই।

আবার তেড়ে যাই, “চালাকি পেয়েছ? ঘুমর বুঝি তোমাদের? ও তো রাজপুত রাজারাজরার পাটরানী আটরানীরা নাচত। ভীলরা আবার ঘুমর জানে নাকি! এত্তো কঠিন নাচ।”
এরপর আর ছাড়ে! যেতেই হয় উৎসবে। আমিও না – ছোড়নেওয়ালী। আটুল বাটুল হয়ে বসেছি দড়ির খাটিয়ায়। আহা! কালো মেয়েগুলো, রোগা রোগা জঙ্গুলে মেয়েগুলো – রেশমী পোশাক নেই, গয়নার বাহার নেই, কি ঘুমর ঘুরল; সমস্ত আরাবল্লীও যেন ওদের সাথে আজ…..

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।