• Uncategorized
  • 0

T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || বিশেষ সংখ্যায় প্রদীপ দে

চলবে,চলছে যার শেষ নেই 

কেলোবাবা, ভালো নাম কালীনাথ দাস, কি করে যে বাড়ি থেকে পাড়া প্রতিবেশীদের কাছে কেলো বাবা নাম অধিগ্রহণ করলো তা একমাত্র ভগবানই বলতে পারবেন। চেহারা ছিপছিপে,লম্বা,অবিদ্যা আর বুদ্ধির ঢেঁকি। বয়স কতো হবে? -হ্যাঁ তা ৪২ তো বটেই।
একটি মাত্র বউ তার, ২৭ এর ছুঁড়ি, বিশাল শরীর, ভীষণ নিজকৃত জ্ঞানী, সব জান্তা। নাম তার লাকী। উনিই সর্বময়ী কর্তা বা কর্তী যা খুশি বলতে,করতে পারেন। কেলোদাকে বগলে চেপে রাখেন, নিজে যা ভাবেন তাই করেন।
ছেলে পটা। হাড় লিকলিকে, লম্বা,কেলটে। বিদ্যালয় যাওয়া শুরু হয়েছিল ঠিকই কিন্তু শেষ হতেও সময় অপচয় হয়নি। মার খেয়ে খেয়ে হজম করে নিয়েছিল তার হাড়ের শক্ত কাঠামো। শেষমেশ মা নিজের শিক্ষা দিয়ে ওকে মানুষ করার চরম দায়িত্ব নিয়ে শান্ত হয়। ১৪ বছরেই ছেলে করিৎকর্ম্মা।নিজেই ব্যবসার গোলমালের মোকাবিলা করেন।
ছোট মেয়ে, পটি। পটিয়সি। বয়স ১২, পরিবারের একমাত্র বুঝতার, দেখতে শুনতে বেশ ভাল। পড়ালেখা চালিয়ে সংসারের কাজেও হাত লাগায়। বাবা, মা আর দাদা মিলে হোটেল চালায়, বাড়ির লাগোয়া হোটেল, দুবেলা ওখানেই খাওয়াদাওয়া। কিন্তু সংসারের আরো অনেক কাজ যা স্কুল ফেরত সেরে ফেলে সে। তারপর বই নিয়ে বসে। এই পরিবারে এই চারজনের পৃথিবীতে সেই একটু অন্যরকম।
সকালে উঠে কেলোদার প্রথম কাজ হলো হোটেল ঘর ঝাড়ু লাগানো, তারপর ধোরপোঁচ। উনুনে আগুন জ্বালানো। প্রতিদিনই এই আগুন জ্বালাতে গিয়েই নানান ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়। গোবরের গুঁটে ভিজে থাকায় চুলো জ্বালাতে তাকে নাজেহাল হতে হয়।
লাকী এসে মুখ ভেঙচায়– কোন কর্মের পুরুষ তুমি? চুলোয় আগুন দিতেও পারো নি? নিজের চুলায় কোন জনে আগ মারাবে?
ছেলে এসে সামাল দেবে — সরে যা বাপ আমি একবার দেখেলি।
ঘুঁটে তে বেশি করে কেরোসিন মেরে দিয়াশলাই ঘষে দেয় সে। আগুন ও লকলকিয়ে ওঠে।
লাকী র মুখও চড়ে — কোন টে বাপ আর কোনটে ছিলা বলা মুশকিল আছে বটেক।
বাপ কেলো সরে পরে। ঝামেলা বাড়াতে চায় না।
আনাজ নিয়ে বসে।
গোয়ালা দুধ দিতে আসে। লাকী দুধ দেখেই ঝগড়া বাঁধায় — রোজ তোর পানি বেশি থাকে। কাল থেকে আর আনবি নে। পয়সা কি আমি পয়দা করি?
এতো ঝামেলার মধ্যেই চুলো জ্বলে। টিফিন বানে।
খরিদ্দার আসে যায়। নিজেরাও খায়। পটিও স্কুল যায়।
দুপুরেও খরিদ্দারের সংগে রোজই গন্ডগোল হয়।
বাকী, ধার এই সব নিয়ে। লাকী খাঁ খাঁ মেজাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের উপর। নিজের আখের ভাল বোঝে সে। হোটেল চালানোর জন্য সে খুব কাজের। মদ মাতালে,ধান্দাবাজদের কেলিয়ে সায়েস্তা করতে তার জুড়ি মেলা ভার।
এইরকম ভাবেই দিন চলে। রাত আসে। কেলো বাপ অকেজোর কেজো লড়াই চালায়। ছেলে মা বাপকে সামাল দেয়। আর মেয়ে পটি সামনের দিকে এগোতে চায়।
এদের ভবিষ্যৎ কি এরা ভাবে না।ভাবতেও পারে না, চায়ও না। জীবন যুদ্ধে যে যার ভূমিকায় লড়াই চালায়। এই ছবি গুলো কোনো ফ্রেমে ধরা যায়না, এরা গতিশীল। এরা বাঁচে, এদের লড়াইয়ের মধ্যে দিয়েই।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।