• Uncategorized
  • 0

গ এ গদ্যে পৃথা চট্টোপাধ্যায়

আমার মুক্তি ঘাসে ঘাসে…

এ শহরে ক্রমশ অসহ্য হয়ে উঠছে শরীর আর মন। নিরানন্দ দিন , নিরাসক্ত হচ্ছে রাত। দরকার ছাড়া কোনো কথা আসে না। অকারণ ভয় আর বিরক্তিতে হারিয়ে যাচ্ছে স্বাভাবিক জীবনের চাহিদারা।
মনে হয় অচেনা কোনো দেশে আছি যেখানে পেটের খিদে ছাড়া কেউ কারো ভাষা বোঝে না।অ্যাবসার্ট নিরালম্ব একটা বিষণ্ণতা পিছু নিয়েছে। হাঁপিয়ে পড়া জীবনে খোলা আকাশ দেখতে নির্জন দুপুরে অথবা সন্ধ্যার পরে চুপচাপ ছাদে আসি। জলের ট্যাঙ্কের ওপাশে দুটো ছায়া সরে যেতে দেখে গা ছমছম করে। তবু কৌতূহলী হয়ে দেখার চেষ্টা করি। অন্তরঙ্গ ছায়া ক্রমশ সরে যায়।আর দেখতে পাই না। এগোতে পারি না। অপেক্ষা করি কি আর্তনাদের? দূরে হুটার বাজিয়ে ঘন ঘন অ্যাম্বুলেন্স ছুটছে শুনতে পাই। মনে পড়ে , মাকে এরকম অ্যাম্বুলেন্সে করে টাটা মেডিক্যাল হসপিটাল থেকে যে বার বাড়িতে নিয়ে গেছিলাম কিছুটা সুস্থ হলেও তারপর আর মাত্র চার মাস বেঁচেছিল। তখন পৃথিবীর কোনো অসুখ ছিল না। ট্রেইন্ড আয়া মমতা খুব সেবা যত্ন করত মায়ের। ওর বর নেশা করে মারধোর করে বলে গ্রামে যেতে চায়তো না মমতা। বছর ছয়েকের মেয়েটাকে একটা হোমে দিতে চেয়েছিল। হোমগুলো সম্পর্কে খুব আতঙ্ক আমার। যেন মোটেই নিরাপদ না সব কিছুই। আমার বাড়িতে কাজ করতো মেনকা। আট বছরের মেয়েটাকে হোমে দিয়েছিল। হাসিখুশি মেয়েটা কেমন বোবা হয়ে গেছিল তারপর থেকে। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো। আজ এইসব মনে পড়ছে। ভাবনাগুলোকে সিঙ্ক্রোনাইজ করার চেষ্টা করি। সময়ের পথে পথে হাঁটি। কলকাতার রাস্তা, মার্কেট, মল, সুপার স্পেসালিটি হসপিটাল, মানুষ- জন ছেড়ে, বিষণ্ণতার অনেক অনেক দূরে সরে যেতে চাই। কখন যেন মনে হয় একটা চৌকো মাঠের পাশে হাঁটছি তো হাঁটছিই । ঝুঁকে পড়েছে নীল রঙের আকাশ। এই পথ, মাঠ, কৃষ্ণচূড়া, জারুল, ইউক্যালিপ্টাস খুব চেনা লাগে। ক্রমশ স্কোয়ার ফিল্ডের ভোরের শিশির ভেজা সুগন্ধি ঘাসে ঢেকে যায় শরীর।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।