এক মাসের গল্পে পাপড়ি ভট্টাচার্য (শেষ পর্ব)

ক্যানভাসে নানা রং

সত্যি বলতে কি মনটা আনন্দে গুর গুর করে উঠলো আমার। অনন্যাও বাদ যায়নি।ও এখন কলকাতায় বাবা মায়ের কাছে আছে। অনন্যা গ্রুপে জানাল, ওর শশুর মশাই এর একটা বাগান বাড়ি আছে টালিগঞ্জে, ইচ্ছে করলে তোরা ওখানেও করতে পারিস, ভাড়া লাগবেনা। অনন্যা নিজের অহংকার দেখানোর সুযোগ টা হাত ছাড়া করলনা।
নির্দিষ্ট দিনে আমরা শ্রীরামপুরের একটা কমিউনিটি হলে জমায়েত হলাম।তুমুল আড্ডা,নাচ গান খাওয়া দাওয়া, মজা সাঙ্ঘাতিক আনন্দ যাকে বলে।
সেরার সেরা বরকে নিয়ে অনন্যা এসেছে।কি দামি পোশাক।রূপ যেন ফেটে পড়ছে। কিন্তু ঠোঁটে সেই উচ্ছল প্রাণবন্ত হাসিটা নেই।ম্রিয়মান চোখ দুটিতে রাজ্যের বিষন্নতা। সকলের হৈ হল্লা,হাসি ঠাট্টার মধ্যে অনন্যা যেন
একটু অফ মুড। অনন্যা কবে ইশ্যু নেবে এইসব হাসি ঠাট্টা ঠিক জমলনা। অনেক বন্ধু খুব বিরক্ত হয়ে উঠে গেল।
খাওয়া দাওয়ার পর ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আড্ডা চলছে। আমি লক্ষ্য করলাম, অনন্যার সঙ্গে সবার দূরত্ব একই রকম। সোমাকে বললাম -কি ব্যাপার বলতো । অনন্যার থেকে তোরা দূরে সরে থাকছিস কেন? পুরনো কথা বাদ দেনা এখন।
সোমার গলার স্বরে ঝরে পড়লো তিক্ততা। নর্দমার ঘোলা জল বেরোবার রাস্তা পেয়ে সবেগে বেরিয়ে এলো।চাপা গলায় সোমা বলল,এক সময় অনন্যা যা যা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য।কারও সঙ্গে ওর সম্পর্ক গভীরে যায়নি। শুধু খেলা।শেষে আরও একটা খারাপ কান্ড ঘটিয়েছে। আমার কলেজের বন্ধু অনির্বাণ,ওর বোনের হঠাৎ বিয়ে ভেঙে গেল।কেউ বুঝতেই পারলনা কলকাঠি টা নেড়েছে অনন্যা। জানিসই তো বরাবরই ওর স্বভাব অন্যের মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়া। আমাদের সঙ্গে ফেসবুকে ফ্রেন্ড লিস্টে ও তখন ছিল। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও ছিল। একদিন অনন্যার রিসেপশনের পিক দেখে অনির্বাণ আমাদের জানাল যে অনন্যার এই বর গৌরবের সঙ্গেই ওর বোনের সমন্ধ করে বিয়ে ঠিক হয়েছিল। কীভাবে কি সব ঘটে গেল,ভাবলে শরীর খারাপ লাগে।
বুঝলি সৃজনী, রাগে দুঃখে ঘেন্নায় আমরা অনন্যাকে গ্রুপ থেকে আউট করে দিলাম।থাক তুই তোর সেরা বর ঘর নিয়ে, স্বার্থপর মেয়ে কোথাকার।
–তাহলে তোরা এই গেট টুগেদারে ওদের ডাকলি কেন?
–নারে, আসলে এটা তো বন্ধু কাম কলেজ ব্যাচ তাই আমরা কাউকে বাদ দিতে তো পারিনা। তবে… কি তবে?
দোলা কানে কানে বলল- এখন অনন্যার একটা মারাত্মক দুঃখ আছে। আমাদের খুব খারাপ লাগে। বিশেষ করে গৌরবের জন্য।–কেন দোলা, কি এমন দুঃখ।
সোমা আর দোলা আরও কাছে এল।বলল,জীবনে অন্যকে কস্ট দিয়ে সেরা সব কিছু পেয়েও অনন্যা আজও মা হতে পারেনি। অথচ আমরা সবাই জানি অনন্যা প্রচন্ড বাচ্ছা ভালবাসে।
দোলা একটা শ্বাস ফেলে বললো, কি ভাগ্য দ্যাখ।
আমি তো কিছুই জানিনা।কার সমস্যা?
-অনন্যার ।বার বার মিসক্যারেজ। এখন সব কিছু হাতের বাইরে চলে গেছে।
দোলা ইশারায় দেখাল অনন্যাকে,দ্যাখ সৃজনী বাচ্চাদের সামনে বসে আছে অথচ ছুঁয়ে আদর করছেনা।
ইশ্ ওতো ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে।
-যাচ্ছে নয়, চলে গেছে। চিকিৎসা চলছে।সোমা বলল।
-সোমা, দোলা তোরা এত সব জানলি কি করে।অন্যরা জানে?
-গ্রুপের সবাই জানে।
এরপর সোমা বলল–আরে আসল ঘটনাই তোকে বলা হয়নি। বেশ কিছু দিন আগে গৌরব অনির্বাণ কে ফোন করে ওর সব কথা বলে। এবং ক্ষমাও চায়। অনন্যা সুইসাইড করবে বলেছিল ওকে বিয়ে না করলে। কিছুতে বুঝতে চায়নি যে গৌরবের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তারপর বলে ডাক্তারের নির্দেশে এখন বেবী না হওয়া পর্যন্ত ওকে খুব আনন্দে রাখতে হবে।
তারপর আমাদের এই প্ল্যান শুনে খুব খুশি হয়ে অনন্যাকে নিয়ে কলকাতায় আসে।গৌরব অনন্যাকে সুস্থ করে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
কয়েক মাস পর
স্বাভাবিক ভাবেই সবাই যে যার সংসার, অফিস, বিজনেস নিয়ে ব্যস্ত। শুধু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে সামান্য যোগাযোগ। তবে গ্রুপে গৌরব সব সময় আ্যকটিভ থাকেনা।
গ্রুপে অনন্যাকে সৃজনী বলল একটা বাচ্চা আ্যডপ্ট করে নিলেই তো হয়।সবাই চ্যাট করে সেটা সমর্থন করল। অনেকে নানা প্রতিষ্ঠানের নাম বলল, গুগল সার্চ করে।
অনন্যা লিখল, আমি অনেক বলেছিরে। বাচ্চা দত্তক নিলে একটা অনাথ শিশু বাবা-মা পাবে আর আমাদেরও ইচ্ছে পূরণ হবে।না,তা নেবেনা। নিজেদের রক্তের সন্তানচাই। আসলে অসুস্থ আমি নই। অসুস্থ ও নিজে আর পরিবারের লোকজন……….

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।