গদ্য কবিতায় প্রদীপ বসু

খেয়ালী ভালোবাসা

মাঘের শেষে শুক্র কিংবা শনিবার ছিল,
তুমি এলে সঙ্গে ছিলো তোমার দিদি,
অষ্টাদশীর খোলা চুলে,সাদা টপ আর সবুজ লম্বা স্কার্ট,সুন্দর কোমর বন্ধনী একটা আলাদা দ্যুতি বের হচ্ছিলো,
ভাত খাবার পরে দুপুরে হটাৎ তুমি ধরলে বায়না…
আমাকে শুতে হবে তোমার পাশেই,
আমার দিভাই ছিলো আমার সাথেই ,
লজ্জায় ভয়ে আমার বুক ধুকপুক করে কাঁপছিল,কি জানি দিদিভাইরা কী ভাববে???
না জানি কোনও এক অজানা আশঙ্কায় বুকের ভিতরে হাঁপর টানছিল বেশ কিছুক্ষণ,
আমরা শুলাম জানালার ধারে, আধা আলো ছায়াতে,দিভাইরা শুলো খাটের অন্য প্রান্তে…
মাঝখানে পাশবালিশটা গড়েছিল এক দুর্ভেদ্য প্রাচীর।
ওদের গল্পের শেষ নেই, বহুদিনের না দেখা বন্ধুত্বের সীমাহীন আলাপন।
দু’এক কথার কথা হচ্ছিল আমাদের মধ্যে,
মাঝের দুর্ভেদ্য প্রাচীরের বেড়া কখন যে ভেঙে ফেলেছিলে,আরও কাছের থেকেও কাছে এসেছিলে,
এই বোকা পুরুষ মানুষ টা,সে অভিপ্রায় বুঝতে পারিনি।
সহসা বজ্র মুষ্টিতে টেনে নিলে একান্তে তোমারই বাহুলগ্নে সন্তর্পনে,
তপ্ত নিশ্বাস পড়ছিল আমার কপালে ঠোঁটে মুখে তোমার আদরের সাথেই,
মনে হোল একটা নিশ্চিন্ত নির্ভর করার নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে বেড়াচ্ছিলে এতোদিনে,
তোমার নরম পেলব বুকের স্পর্শের ওঠানামা,আমার বুকের ভিতরের প্রাচীর ভেঙ্গেছিল সেদিন।
নিশ্চুপ সায় আমারও ছিল আগেই,তাই আলতো করে উষ্ণ চুম্বনে এঁকে দিলাম কপালে,চোখের পাতায়,চিবুকে ও গালে হালকা ছোঁয়ায়।
তুমি বলে ছিলে ফিসফিস করে,
ইসসসস কী আদরের ছি রি! লজ্জাবতী লতা,
এ তুমি কেমন পুরুষ???
অধরা কে হাতের মুঠোয় পেয়েও পারছোনা আদর করে ছিনিয়ে নিতে সবটুকু???
আমি আমিতো উজাড় করে নিংড়ে দেবো বলেই বায়না করে ছিলাম, দিভাইয়ের কাছে সেই সকাল থেকেই….
এ ভারী অন্যায় হে প্রেমিক প্রবর পুরুষ!
এবার আমি হাত দুটি ধরে বললাম,তুমি তো আমারই থাকবে,এতো বেশি তাড়াতাড়ির কী খুবই প্রয়োজন???
এভাবেই সেই মুহূর্তে মন দেয়ানেয়ার পালা খানিকটা এগিয়ে রইল আগামী ভবিষ্যতের।।
চৈত্র শেষে বৈশাখে ভাবছিলাম একটি অর্চিজের কার্ড দেবো গোধূলি বেলায়,
১লা বৈশাখে তোমাকে তুলে দেবো,
তাতে লিখব ‘আমিও খুব খুবই ভালোবাসি তোমাকে ‘……
একদিন দুপুরে কান বিদীর্ণ করা আওয়াজ তুলে একটা ট্রাক এসে দাঁড়ালো তোমাদের দরজায়,
শুনলাম তোমরা চলে যাচ্ছ এ পাড়া ছেড়ে অনেক দূরে বহু দূরে….
তোমার বাবার ট্রান্সফারের চাকরি, যেতে হবেই,
সেই সময় তেমন কোনোও কথা হলোনা তোমার সঙ্গে,
শুনলাম দিভাইয়ের মুখে,তুমি হয় তো দেখা করবার জন্য আকুল ছিলে,
আমিও সবার অলক্ষ্যে তোমাকেই খুঁজে ছিলাম বাড়ীর ছাদে,বারান্দার আনাচে কানাচে….
উল্টোদিকের বন্ধুর বাড়ী থেকেও দেখতে পেলাম না…
মনের মধ্যে ছটফট করতে লাগলো, বেরিয়ে এলো বুকফাটা নীরব কান্না আর একরাশ দীর্ঘশ্বাস,
সরল নিষ্পাপ দুটি মন কে পিষে মারলো একটি বদলীর চাকরী…..
মুছে গেল মাঘের শেষের সেই দুপুরের নিশ্চিন্ত নির্ভর করা আশ্রয়,
আজো চেয়ে থাকি চলে যাওয়ার সেই পথের বাঁকে,
নীরব বোবা কান্নায় চোখে জল নামে,
বসে বসে আনমনে ভাবি সবটাই কি ছিল আমার ভাগ্যের পরিহাস না তোমার খেয়ালী ক্ষনিকের ভালোবাসা…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।