• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে পিয়াংকী (পর্ব – ২)

স্টেশন থেকে সরাসরি

আপ গ্যালপিন

আজ ছাব্বিশে এপ্রিল। সকাল ছ’টায় কোনরকমে দু’গরস ভাত মুখে ঢুকিয়ে বেরিয়ে এসেছি।আমার বাড়ি থেকে দশ মিনিট হাঁটলে বাসরাস্তা। অতি তাড়াহুড়োতে সেই পথ পার করেছি ছ’মিনিটে।এরপর পাঁচটাকা ভাড়া বেশি দিয়ে অটোর বদলে টোটোকোম্পানিতে ঝুলে স্টেশনে পৌঁছেছি। এই সামান্য কথাটুকু পড়েই আপনারা যারা ভাবছেন যে আমি হয়ত কোনো মাল্টিন্যাশানাল অফিসে একটা ভালো চাকরি করি, হয়তো ভাবছেন একটা সংসারের দায়িত্বগুলো পালন করতে করতে আমি দশভুজা হয়ে উঠছি,তাদের জ্ঞাতার্থে জানাই আজ্ঞে আমি কিছুই করি না।
আমি একটি অযথা সময়ের মহিলা বাউন্ডুলে। স্টেশনে স্টেশনে ঘুরে বেড়াই। সক্কাল সক্কাল দৌড়ে ধরতে যাচ্ছি ট্রেন। আপ ডাউন পরপর চলে যাচ্ছে পালা করে। প্ল্যাটফর্মে আমি চুপচাপ বসে আছি। কতো মানুষ, কতো তাদের কর্তব্য। ছুটছে সবাই। ঘড়ি আছে কারোর হাতে, কারোর নেই। তবু ওরাও ছুটে ধরে ফেলছে নির্দিষ্টটা। সঠিক কামরায় উঠে চোখে চোখ রেখে ভিজিয়ে নিচ্ছে যাবতীয় কোলাহল।
আমি কিন্তু কামরায় উঠি না আর আজকাল, তবু যেন কীভাবে গ্রহণ করে ফেলি মানুষজনের গোপন জবানি। জবানবন্দি দিয়ে যায় যারা, তাদের নথিতে তারিখ উল্লেখ করে লিখে রাখি তাদের ডাকনাম। আঙ্গুলের ফাঁকে জমিয়ে রাখি জোয়ারের জল। তবু কামরায় উঠি না।
“গতজন্মে কোন নবাবের ঘরে জন্মাইছিলি তুই, কুটাগাছটাও নাড়স না “… মা প্রায়শই বলতো।নাহ আজ আর এসব মিষ্টি তির্যক কেউ করে না, বলা ভালো আমিই করতে দিই না, সচেতনভাবেই। একমাত্র মা ই জানতো স্টেশন নিয়ে একটা মারাত্মক অবসেশন কাজ করে আমার মধ্যে। নবাবের ঘরে জন্ম হয়নি, হয়েছে রাজারানীর ঘরে । নইলে ইচ্ছেমতো যেখানসেখান বেড়িয়ে পড়ে ফেসবুক আপলোডানোর আগে পাঁচ নয় পঞ্চাশবার ভাবতে হতো।
এহেন নবাবনন্দীনির স্টেশনযাত্রায় নতুন সঙ্গী হল লাইভ সেশন। একটা প্ল্যাটফর্ম। একশটা ট্রেন। একলক্ষ মানুষ। তাদের আবার একনিযুত আনুষাঙ্গিক।
একটা বাতিল কামরায় কিছুক্ষণের জন্য তাদের ভরে দিতে হয়। সাথে দিতে হয় পর্যাপ্ত বাকশক্তি। শ্রবণশক্তি কেড়ে নিয়ে র‍্যাপিডফায়ার রাউন্ড চলে। বেশ খানিক্ষণ পর লেগে যায় পূর্বপরিকল্পিত যুদ্ধ। বাতিল কামরায় শ্যাওলা ধরা উঠোন থেকে তারা ঘষে তোলে অবাঞ্ছিত পল্লব। একজন চিৎকার করে , অন্যেরা শুনতে পায় না। একজন কাঁদে, তার পাশাপাশিরা ভ্রুক্ষেপহীন থেকে যায় যুগের পর যুগ
এখন ওরা শব্দভিখারি। ওরা আওয়াজ ভরে নিতে চাইছে গায়ের চামড়ার নিচের মহল্লায়।
ওরা জানে শব্দই ব্রহ্ম । ব্রহ্মই ঈশ্বর।
ঈশ্বরই আদতে মানুষ।
আমি পিয়াংকী! এতক্ষণ “স্টেশন থেকে সরাসরি” ছিলাম আপনাদের সাথে।
পরবর্তী স্টেশনে অন্যকেউ অন্যকিছু…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।