T3 || আমার উমা || বিশেষ সংখ্যায় নীল মিত্র

আজকের উমা

দূর্গার বাবা অসিম বাসু স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজের একজন ছিলেন। ছোটবেলা থেকে দূর্গাকে শিখিয়েছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। তাই দূর্গা মেয়ে হয়েও স্কুল কলেজে লীডার হয়ে প্রতিবাদ করেছে কোন ভুল হতে দেখলেই। বাবা আজ আর নেই কিন্তু দূর্গার মধ্যে প্রতিবাদের মানষিকতা আজও রয়ে গেছে। সে আজকের যুগের উমা হয়ে উঠেছে ধীরে ধীরে। অন্যায় সহ্য না করে মা দূর্গার মতো রূপ ধারণ করে ও।

বাবা মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্টে তার মা মালতিদেবী ওকে বড়ো করে তুলেছেন। এখন ও একটা প্রাইভেট কম্পানিতে চাকরি করে। এতোদিন বেশ ভালো চলছিল। কম্পানির মালিক বয়স্ক অটল জেটলানী খুব ভালো মানুষ ছিলেন, দূর্গাকে ভীষণ স্নেহ করতেন আর ওর কাজে খুব সন্তুষ্ট ছিলেন। ওদের স্বধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিয়ে ছিলেন তাই ওরাও মন দিয়ে কাজ করতো। ভদ্রলোক হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। তারপর তার বিলেত ফেরত ছেলে শক্তি জেটলানী বস হয়ে আসেন। লোকটিকে প্রথম থেকেই দূর্গার পছন্দ হয়নি। ভীষণ অহংকারী আর চরিত্রটাও ভালো নয়। ও আসার পর থেকে কম্পানিতে টাইমের ঠিক থাকে না। 6টাতে ওদের ছুটি হতো, কিন্তু কোন না কোন অযুহাতে শক্তি মহিলা স্টাফদের বসিয়ে রাখতো।

শোনা গেছে ওদের কম্পানিতে কর্মরতা নর্মতার সাথে শক্তির একটা খারাপ সর্ম্পক আছে, নর্মতা গরীব তাই টাকার জন্য ও শক্তির সব খারাপ আবদার মেনে নিয়েছে। স্বাধীন দেশের মধ্যে নারীদের শোষনের এই রূপটা দূর্গা ঠিক মেনে নিতে পারছিল না। এ কেমন স্বাধীনতা যেখানে নারীদের শোষনের শিকার হতে হয়!
একদিন নর্মতা টিফিন টাইমে খুব কাঁদতে লাগলো দূর্গার কাছে। দূর্গা জানতে চাইলো কি হয়েছে। তখন নর্মতা বললো শক্তি ওকে চাকরি থেকে বার করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ওকে শারীরিক ভাবে ভোগ করে যাচ্ছে গত ৮মাস ধরে। ও প্রেগনেন্ট হয়ে গেছে, এখন নাকি শক্তি মানতে চাইছে না যে ওর পেটে যে সন্তান আছে তা শক্তির-ই। এটা শুনে দূর্গা খুব রেগে গেল। ও মনে মনে ঠিক করলো শক্তিকে শাস্তি দিতেই হবে।

সেই মতো নর্মতাকে বললো এর পর যেদিন শক্তি তোকে কোথাও যেতে বলবে তুই আমাকে জানাবি।
সুযোগ এসেও গেল। শক্তি নর্মতাকে ওর গেষ্ট হাউসে নিয়ে যাওয়ার প্লানিং করল। আর এদিকে দূর্গা ও নর্মতাকে একটা ছোট পেন ক্যামেরা দিয়ে বললো আজকে গেষ্ট হাউসে ঢোকার পর তুই এটা চালিয়ে দিবি আর সব রেকর্ড করবি। যথারীতি শক্তি নর্মতাকে নিয়ে যেতেই নর্মতা দূর্গার কথা অনুযায়ী সব কাজ করলো আর পেনটা এনে দূর্গাকে দিল পরের দিন।
দূর্গা তখন ওটা নিয়ে শক্তির কেবিনে ঢুকলো আর শক্তিকে বললো মেয়েদের জীবন নষ্ট করার খেলাটা এবারে বন্ধ করুন। নর্মতাকে আপনি বিয়ে করে বউ এর সম্মান দেবেন নাকি এই ভিডিওটা আমি পুলিশের হাতে তুলে দেবো। শক্তি প্রথমে না মানলেও শেষে ভয়ে মানতে রাজি হলো। সবাই দূর্গার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে গেল। স্বাধীনতার অপব্যাবহার করতে নেই আর কাউকে শোষন করতে নেই, এই কথাটা দূর্গা ভালোমতো বুঝিয়ে দিল শক্তি জেটলানীকে। আজকে দূর্গা সত্যি মা দূর্গার মতো অসুরকে শাস্তি দিলো।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।