ক্যাফে টক

আমরা যারা দুহাজার সালের আশেপাশের সময় থেকে লেখা টাকে সিরিয়াসলি নিয়ে লেখালেখি শুরু করেছি আমরাই জানি তখন পরিচিতি পাওয়া কতটা মুশকিল ছিলো। কোথায় কারা সাহিত্যের চর্চা করে জানিনা, কোথায় লেখা দিলে কোন ম্যাগাজিনে লেখা বেরোবে জানিনা, কোথাও কেউ কবিতা পড়তে ডাকে না। চেনাজানা বন্ধুদেরকেই জোর করে কবিতা শোনাতে হোতো।
আর সবার জানিনা , শুধু আমারই ১৯৯৭ তে লেখা শুরু করার পর একটি কবিতা , একটি দুপাতার সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশ করতে ২০০৫ সাল অবধি অপেক্ষা করতে হয়েছে। সেই দুপাতার সাহিত্য পত্রিকা আমাকে স্বর্গসুখ দিয়েছিলো, দিয়েছিলো আমার কবি পরিচয়।
তারপর এলো ফেসবুক , একটা ঝড় বয়ে গেলো। সাহিত্যের সব মনোপলি ভেঙে তছনছ। অবহেলিত রা নিজেরাই একেকটা সংস্থা হয়ে উঠলো। চারিদিক থেকে ম্যাগাজিন , বই , প্রকাশের খবর, সাহিত্য আড্ডার খবর
সব হাতের মুঠোয়। আজ লিখতে শুরু করলে কালকেই পাঠিয়ে দেওয়া যাবে কোনও না কোনও ম্যাগাজিনে। কেউ কেউ টাকা চাইবে , তা চাক তবুও তো আজ জন্মেই কাল কবি।
খারাপ ভালো মিশিয়ে আমার ভালো লাগলো ব্যাপরটা। এই তো সাম্যবাদ , সবার জন্যে সুযোগ। এখন আমার নাম বাঁকুড়ার একজন জানে , বনগাঁও এর একজন জানে, বোলপুরের একজন জানে আমিও কবি। এইতো আমরা ছড়িয়ে পড়ছি দিকে দিকে।
তারপর এলো অনলাইন পত্রিকা। আরও বড় প্লার্টফর্ম, আরও বেশি সূযোগ। খুব আশাবাদী ছিলাম অনলাইন পত্রিকা নিয়ে। কিন্তু হতাশ লাগে যখন দেখি যে যেই লেখাটা দিয়েছে সে অন্যদেরটা দেখেনি অবধি। আমি একজনের গল্প প্রকাশ করেছিলাম , তিনি সেই লিঙ্কটি ফেবুতে দিয়ে congratulations, শুভেচ্ছা, আদরবাসা, অসাধারণ সব পেয়েছে। পরে একদিন তার সাথে সামনাসামনি কথা হয় । সে কোথায় লেখটা দিয়েছিলো বাদ দিন , সম্পাদকের নাম অবধি জানেনা।
বাস্তবিক পক্ষে এর জন্যে আমরাই দায়ী, আমরা কেউই হয়তো কারো লেখা পড়িনা। তাই অনুরোধ করবো খোলা মঞ্চ পেয়ে খিল্লি কোরো না। আমরা যারা সূযোগ পাইনি তারা জানি। তাই সূযোগের অপচয় করলে সূযোগ ও কমে আসবে।
নিজের সাথে অন্যের লেখাকেও সম্মান দিন, ভালো লেখক হয়ে উঠতে গেলে ভালো মানুষ হওয়াটা আগে প্রয়োজন।