|| মানচিত্র আর কাঁটাতার, হৃদয় মাঝে একাকার || বিশেষ সংখ্যায় নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত

সত্যমেব জয়তে
“ सत्यमेव जयते नानृतं सत्येन पन्था विततो देवयानः ।
येनाक्रमन्त्यृषयो ह्याप्तकामा यत्र तत् सत्यस्य परमं निधानम् ॥”
১৫ অগাস্ট ,১৯৪৭ – দক্ষিন এশিয়ায় একটি জনবহুল দেশ ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে নিজের হাতে শাসন গ্রহণ করল।বলা উচিৎ টুকরো করা,রক্তপাতে দীর্ণ ভূখণ্ড দিশেহারা রাষ্ট্র পৃথিবীর বুকে দাঁড়াল।………এসব আবেগ দিয়ে লেখাটা লিখতে গিয়ে হতাশ হয়ে যাচ্ছি। যে সমস্যা আগেও ছিল সেই এক সমস্যা নিয়েই আমরা এখনো আছি।
ভারতবাসীর অসাধারণ বুদ্ধি নিয়ে গর্ব করার মতো অনেক কিছু আছে ,মানে অনেক পথ প্রদর্শক আছেন, কিন্তু সাধারণ বুদ্ধি? যে বুদ্ধিতে ঘুষ দিতে-নিতে নেই, মিথ্যা বলে সর্বদা জিতে যাওয়ার মধ্যে কোন বুদ্ধিমত্তা নেই, নদী বাতাস বিষাক্ত করতে নেই, ছোট বাচ্চাদের সামনে কুশ্রী আইটেম গান নাচ করতে নেই, মদ খেয়ে গাড়ি চালাতে নেই, মস্তানি করে অন্য কে ভয় দেখানোর মধ্যে বীরত্ব নেই, মস্তান কে দিয়ে নিজের ব্যক্তিস্বার্থ পূরণ করার মধ্যে কোন মহত্ব নেই,কোন মানুষ কে ধর্ম জাতি তুলে ঘৃণা করতে আর উত্যক্ত করতে নেই, অপরাধী সন্দেহে কোন মানুষ কে সবাই মিলে ঠেঙিয়ে মেরে ফেলতে নেই, সাধারণ মানুষের জন্যে নির্ধারিত অর্থ স্বজন পোষণের জন্যে ব্যয় করতে নেই, … ভারতবাসী জানে… কিন্তু সেই গুলো করে!এসব লিখতে গিয়ে আমি ভাবছিলাম বোধহয় আমি এসব করি না। আমিও এটা করি,মানে মেনে নিচ্ছি তো রোজ… তার অর্থ হল আমিও সমর্থন করি।
আমাদের দেশের এম্মব্লেম হল ‘সত্যমেব জয়তে’। এটার আমরা যোগ্য নই। সত্য খুব তেতো জিনিস। তেতো খেলে মুখে স্বাদ আসে।তেতো খেলে হজম শক্তি বাড়ে। দেশের মানুষ সমন্ধে প্রথম আর সবচেয়ে বড় সত্য হল- ভারতবাসী প্রবল কলহ প্রবণ আর স্বার্থপর।তাদের বুদ্ধি, অর্থ, ইচ্ছাশক্তি, নৈতিকতা এই কলহ প্রবণতাতে ব্যয় করে।আর তার ওপর দাঁড়িয়ে আছে আমাদের রাজনীতি এবং
মনোরঞ্জন। আমরা কোথাও ‘আলোচনা’ করি না,আমাদের দুর্বিষহ শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্য নিয়ে,স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অব্যবস্থার হাল নিয়ে। আলোচনা হয় না… কেবল দোষারোপ হয়। পথ দেখান কেউ? পার্টিসানের সময় হিন্দু,মুসলমান ঐক্য নষ্ট হয়েছিল, সেটা আমরা তৈরি করলাম না, আসলে তৈরি করি না । আর সেই ঐক্য তৈরি হলে রাজনীতি করা যায় না বহু মানুষের। আসলে অন্য ভাবে বলা যায় এই কলহপ্রবনতা দিয়ে অনেকে অনেক কিছু ‘করে খান’। টিভির নিউজ চ্যানেল গুলো তো এই করেই খাচ্ছে। রাজনীতিবিদদের কোথা ছেড়েই দিলাম। যেসব মানুষদের নিয়ে গর্ব করতে পারি তাদের সমন্ধে কুৎসিততম কথা বলে আরও ঘোরতর কলহ করার ক্ষেত্র তৈরি করার মধ্যে ‘চিন্তাশীলরা’ তাদের নিয়ত অস্তিত্ব বজায় রাখছেন। যাকগে, আমার মনে হয় লেখাটা বড্ড নিন্দা প্রবণ করে ফেলেছি। আধুনিক জীবনে এতো গ্যাজেট আমাদের যদি যুক্তি আর বন্ধুত্ব বাড়ানোর জন্যে সে রকম কিছু থাকতো! আমরা কি পথ খুঁজবো না?
এই কলহ প্রবণতার কারণ খুঁজতে গেলে একটি কোটেসান মনে আসছে,
“The Seven Social Sins are:
Wealth without work.
Pleasure without conscience.
Knowledge without character.
Commerce without morality.
Science without humanity.
Worship without sacrifice.
Politics without principle.
:Frederick Lewis Donaldson
আমরা সামাজিক মানুষ হিসাবে এই সমস্ত রোগে আর পাপে আবদ্ধ। একমাত্র উপায় এই “দেশসেবা” কাজ টি কে নিজেদের “রাজনৈতিক” কাজ হিসাবে না ভেবে, দেশ কে নিজের আপন দায়িত্ব বলে ভাবা।সেকি চেয়ার না পেলে এসব ভাবা যায়। আগে চেয়ার পেতে হবে তো! আমার এই সুন্দর ‘বিরাট বাড়িতে’ আমরা কেবল ঝগড়া করি। চেয়ারে আগে যে বসেছিল তার নামে দোষ দিই…
যে কাজ গুলো আমরা চেয়ারে না বসে করতে পারি-
• যেদিকে সত্য তার পাশে থাকতে হবে আমাদের। আর্থিক দুর্নীতি হোক, কিংবা মানুষের প্রতি অপরাধ। গণতন্ত্রে শাসক পক্ষ প্রভু নয়। দুর্বৃত্ত যারা তারা অপরাধী যত শক্তিশালী হোক। ভয় পেলে চলবে না।
• পরিবেশ সুন্দর করার চেষ্টা করতে পারি। প্রত্যেক মানুষ পিছু পৃথিবীতে এখন গাছ আছে ৪২২ টা। কিন্তু আমাদের জনবহুল দেশে মানুষ পিছু ২৮ টা গাছ। আসুন গাছ লাগাই। তার যত্ন করি। গাছ যাতে না কাটা হয় তার দিকে নজর দিই।দেশ ভালো থাকবে।