নন্দিনী ভট্টাচার্যর পুরুষকথা

একটু অন্যরকম হোক

“বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে”- একথা লেখার সময় কবি কি ভাবতে পেরেছিলেন এই কথাগুলো পুরুষের মুখের কথা হয়ে দাঁড়াবে ? হ্যাঁ , এই কথাগুলো এতদিন মেয়েদের জন্যই ব্যবহার হয়ে এসেছে। কিন্তু আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি পুরুষমানুষও এর শিকার এবং সে চিত্র কতটা ভয়াবহ  তা আমরা যারা পুরুষ অধিকার নিয়ে কাজ করতে এগিয়ে এসেছি তারা যতটা জানি সাধারণ মানুষ হয়তো ততটা জানেন না ।
যদি বলেন পুরুষের মৃত্যু, আমি তাহলে সেই প্রসঙ্গেই যাবো । ভারতবর্ষে প্রতি বছর 98000  বিবাহিত পুরুষ আত্মহত্যা করেন । সংখ্যাটা নারীর প্রায় দ্বিগুণের থেকে বেশি ।  বিশ্বাস হচ্ছেনা ? কিন্তু সেটাই সত্যি । NCRB রিপোর্ট সেটাই বলে ।
এই  রিপোর্ট আরো বলে ধর্ষণের 71.6% মামলা ই মিথ্যে । বহু পুুুরুষ এই মিথ্যার  জালে খুুইয়েছেন সব। সম্মান, পরিবার এমনকি নিজের জীবন ।
এরপর যদি আসি Corporate World  এ । Sexual Harrarsment এর মিথ্যে অপবাদে বিনা প্রমাণে শুধু অভিযোগ এর ভিত্তিতে চাকরি হারিয়েছেন এরকম পুরুষের সংখ্যা কম নয়। তাঁরা অনেকেই কিন্তু উচ্চপদস্থ ।
Domestic Violence বা 498 A যা রিপোর্ট, পরিসংখ্যান বলছে তার 80% মিথ্যে । অবশ্যই যা রিপোর্ট হচ্ছে তার । সারা পৃথিবীতে শুধুমাত্র Australia তেই  প্রতিদিন 16 জন পুরুষের মধ্যে 1 জন নির্যাতিত হন। বাকি হিসাব পাওয়া যায়নি।
শিশু নির্যাতন এর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা । পুরুষ শিশু নির্যাতনের ঘটনা আমরা কেউ আলোচনাই করতে চাই না । POCSO আইনেও এই মিথ্যা মামলার ছড়াছড়ি । পুরুষ শিশু নির্যাতন এর কথা আমরা ভাবি সেভাবে ক’জন ? তাই মৃত্যুদণ্ডের তো প্রশ্নই  দূর অস্ত । প্রহসন মাত্র ।
আমি কিন্তু নারী বিদ্বেষী নই। বরং এটুকুই বলতে চাই ,এই মিথ্যা মামলার জেরেই প্রকৃত নির্যাতিতার বিচার পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে । সব ঘটনাই ভাবাচ্ছে, এটা সত্যি তো ?
এবার আসা যাক একটু অন্য প্রসঙ্গে । যখন কোন নারী অপরাধ করেন মিডিয়ায় তার মুখ ঝাপসা দেখানো হয় । সময়বিশেষে তার পরিবারকেও আড়াল করা হয় । কিন্তু পুরুষটি অপরাধী প্রমাণিত হবার আগেই তার  নাম, ধাম, মুখ এবং পরিবারের বিস্তারিত বিবরণ সবাই জেনে যান । আমার প্রশ্ন নারীর সম্মান আছে, পুরুষের নেই ? তার সমাজ, সংসার নেই ? যদি তিনি নিরপরাধ  প্রমাণিত হন তবে তার এ সম্মানহানির দায় কে নেবে ?  আর অপরাধীর তো কোন জাত নেই । তবে নারীর ক্ষেত্রে এ দ্বিচারিতা কেন? এবার কিন্তু জবাব চাইবার সময় এসেছে ।
দ্বিতীয় প্রসঙ্গে আসি, Human Trafficking বলতে আমরা কেন শুধু মেয়ে পাচার নিয়ে এত উদ্বিগ্ন ? এক বিরাট সংখ্যক শিশু পুরুষ যে দেশের নানা জায়গায় ও বিদেশে নানা অসামাজিক কাজে হাতবদল ও পাচার হয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে আমরা কতটুকু ভাবছি ? আমরা কিন্তু প্রশ্ন রাখবো ।
এরপর আসছি স্কুল Drop Out প্রসঙ্গে । বাচচাছেলেদের মধ্যে এই সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে । এটা কি আমরা জানি বা আমাদের ভাবাচ্ছে ?
চতুর্থত: আমরা  এখনও  Sex Worker বলতে বুঝি মহিলা । কিন্তু এ পেশায় পুরুষদের সংখ্যা বাড়ছে । আর্থ সামাজিক কারণে অনেকে বাধ্য হয়েছেন এ পথে আসতে । এদের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা নিয়ে আমরা কিছু ভেবেছি ? কারণ সত্যি থেকে মুখ ফিরিয়ে বাঁচা বোকামিরই নামান্তর ।
আমার এই লেখার উদ্দেশ্য এটুকুই যে পুরুষের অধিকার মানে তার  সার্বিক অধিকার । শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুরক্ষা সবকিছুর অধিকার । আর সেটা তাকে দিতে হবে । পুরুষদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। একে অপরের পাশে থাকতে হবে । আরো একটা কথা, শুনতে খারাপ হলেও পুরুষকেও তাঁর সব , হ্যাঁ, সবকিছু মানে চোখের জল, রাগ, না পাওয়া, বঞ্চনা , অবহেলা সঅঅঅঅব কিছু বিক্রি করতে শিখতে হবে সুচারু উপায়ে। তবেই  তাঁদের জন্যও আইন বদলাবে ।
সেই দিনটার স্বপ্ন দেখি ভীষণ রকম ।
আর মেয়েদের বলি, আপনার বাবা, স্বামী, ভাই বা ছেলে বিপন্ন হলে আপনিও কিন্তু স্বস্তিতে থাকবেন না। এভাবেই বহু পরিবার আজ ভাঙনের মুখে । তাই মেয়েদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।
নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক । একে অপরকে ছাড়া দুজনেই কিন্তু অর্ধেক আকাশ ।।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।