সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ১)

মজুর, মার্ক্স ও মে দিবস

১|
কার্ল মার্ক্স ( ১৮১৮ – ১৮৮৩) দুটি অসাধারণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। একটি দাস ক‍্যাপিটাল। সহজ বাংলায় পুঁজি। আরেকটিকে গ্রন্থ বলছি পর্যাপ্ত সম্ভ্রম জানাবার ইচ্ছায়, আসলে ওটি একটি প‍্যামফ্লেট, পুস্তিকা। ওর নাম কমিউনিস্ট ম‍্যানিফেস্টো। মার্ক্স এবং ফ্রিডরিশ এঙ্গেলস (১৮২০ – ১৮৯৫), এই দুজনের চিন্তা ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি, ভাবধারা, মিলিয়ে মিশিয়ে মার্ক্সবাদ।
তো মার্ক্সবাদের মূল কথাটা হল শ্রমিকশ্রেণিই মানবসমাজের সবচাইতে অগ্রণী অংশ। তাদের নেতৃত্বে শ্রেণিসংগ্রামের পথে শোষণের অবসান হবে। পুঁজির আমলে রাষ্ট্র পুঁজির সেবাদাস। তাই পুঁজির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে রাষ্ট্রীয় ধারণার বিরুদ্ধেও লড়তে হয়। রাষ্ট্র থাকবে, আর শোষণ শাসন থাকবে না, এ হয় না।
১৮৪০ সালের দিকে কার্ল মার্ক্স তাঁর পিএইচডি থিসিস লিখছিলেন। তখন মার্ক্সের বয়স বাইশ বছর। তাঁর গবেষণা সন্দর্ভের শিরোনামটি এ রকম : The Difference Between the Democritean and Epicurean Philosophy of Nature। গবেষণা পত্র রচনা ১৮৪১ নাগাদ সম্পন্ন হয়ে গেল। লেখাটি সম্পর্কে এভাবে বলা হল, “a daring and original piece of work in which Marx set out to show that theology must yield to the superior wisdom of philosophy”.
এই সন্দর্ভের মধ‍্যে বহু বিতর্কিত উপাদান ছিল, যেগুলিকে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্ষণশীল অধ‍্যাপকেরা বিরক্তিকর গণ‍্য করবেন আশঙ্কা করে মার্ক্স তাঁর সন্দর্ভটি তুলনামূলক ভাবে কম রক্ষণশীল জেনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশ করেন। এই জেনা বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৪১ সালের এপ্রিল মাসে কার্ল মার্ক্সকে পিএইচডি উপাধি দেন।
মার্ক্স অধ‍্যাপনা পেশায় যুক্ত হতে চেয়েও পাননি। সংবাদপত্র ও পত্রিকার সাংবাদিক লেখক আলোচক হয়েছেন।
চৌষট্টি বছর বয়সে, অর্থাৎ মোটামুটি ভাবে পরিণত বয়সে, ১৮৮৩ সালে ১৪ মার্চ তারিখে মার্ক্সের দেহাবসান হল। মৃত্যুর আগে তিনি থাকতেন লণ্ডনে, অবশ‍্য তখন তিনি কোনো রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করতেন না। ১৮৪৫ সাল থেকেই মার্ক্স রাষ্ট্রহীন ছিলেন।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।