শিব ঠাকুরের আপন দেশে।
দেবাদিদেব মহাদেব রাগ করেছেন। এতটাই রেগে গিয়েছেন যে সকাল থেকে গাঁজার কলকেতে একছিলিম পর্যন্ত চেখে দেখেন নি। নন্দী ভৃঙ্গি ভয়ে তটস্থ। পার্বতীও চিন্তাগ্রস্ত। গঙ্গেশ্বর গিরিশ গাঁজার নেশায় ভোম হয়ে থাকলে, সংসার চালাতে সুবিধা হয়। কিন্তু আজ সকাল থেকে নেশাভাঙ না করেই তিনি রাবণ ও বিভীষণকে ডেকে পাঠিয়েছেন।
রাবণকে দেবাদিদেব জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাকে দশমুণ্ড বিশহাত দিলাম এমনি এমনি! একটা জিনিস সামলে রাখতে পারছ না। সামনের কাপড় টানছ, পিছনে বেআব্রু হয়ে যাচ্ছে ! বলি, একটির পর একটি। বিচারপতি গঙ্গার কোর্ট বয়কট করছেন একশ্রেণীর আইনজীবী। তারপর হৈচৈ মন্ত্রীর মেয়ে কিভাবে বেশি নম্বর পাওয়া প্রার্থীদের টপকে চাকরি পাবে? এর আগে শিবালিক সার্ভিস কমিশনের কাজকর্ম নিয়ে সাংঘাতিক সব প্রশ্ন উঠেছে। স্বল্প বেতনের শিবালিক সার্ভিস কমিশনের কর্মীকে বিদেশ ভ্রমণের স্পনসরশিপ কে যোগালো, কেন যোগালো, কি করে শাদাখাতা জমা দিয়ে শিবলোকের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়ে যেতে পারে একজন, ভাল করে কথাটি বলতে পারে না যে, তাকে ফার্স্ট করে দিলে শিবলোকের সম্মান নিয়ে টানাটানি পড়ল যে!
রাবণ কাঁচুমাচু হয়ে একবার শিবের দিকে তাকান আর একবার বিভীষণকে দেখেন। সম্পর্কে তাঁরা ব্রহ্মার নাতির ছেলে, কিন্তু এখন দুভাইয়ে দুই আলাদা আলাদা দলের কর্তা। প্রতিযোগিতা যথেষ্ট। দুষ্ট লোকে বলে সহযোগিতাও যথেষ্ট।
মহাদেব বলিলেন, তোমার লোকেরা মেয়েদের অপমান করিতেছে। আমি তোমাদের জন্য লক্ষ্মী সরস্বতীর কাছে মুখ দেখাইতে পারি না।
রাবণ করজোড়ে বলিল, সেই বেদবতীকে একটু ছুঁয়ে দেখেছিলাম। তারপর থেকে তো কই!
গিরিশ প্রচণ্ড ধমক দিয়া বলিলেন, তোমার দলের জনবুল এক শিক্ষিকার গায়ে জগ ছু়ঁড়িয়া মারিয়াছিল।
রাবণ বলিল, অ, সে তাকে আমি শাসিত করে দেব।
দেবাদিদেব বলিলেন, কী শাস্তি দিবে তুমি! মেয়েদের সম্মান কাকে বলে নিজেই জান না। মেয়েরা ধর্ষিত হয়ে কান্নাকাটি করলে কেন তুমি আগ বাড়িয়ে বলতে যাও, সাজানো ঘটনা? ওরকম বলতে আছে?
রাবণ গাঁইগুঁই করিতে থাকিলে মহাদেব আবার ধমক দিলেন, সেই সুজাতা বর্ধনের সময় থেকেই দেখছি, তুমি বড্ড পেট আলগা।
রাবণ কাঁচুমাচু হইয়া বলিলেন, আর হবে না। ওই ঘরশত্রু বিভীষণটা যদি।
পশুপতি বলিলেন, খামোশ্, নিজের নিজের এখতিয়ারে তোমাদের থাকিতে বলিয়াছিলাম। তাহা না করিয়া ভায়ে ভায়ে দোষারোপ করিয়া শিবলোককে অতিষ্ঠ করিলে। বলি, আপসে লড়িতে শিখাইয়া ছিলাম, সে কি ভুলিয়া মারিয়াছ?
বিভীষণ বলিলেন, আমি সর্বদা দাদাঠাকুরের দলকে বাঁচাইতে চেষ্টা করি। কেহ বেশি বাড়াবাড়ি করিয়া ফেলিলে শিবাই যজ্ঞ লাগাই। শিবাই যজ্ঞ চলিতেই থাকে, চলিতেই থাকে, যতদিন না লোকে ভুলিয়া যায় ততদিন শিবাই যজ্ঞ চালু রাখার নিয়ম।
তারকনাথ বলিলেন, চোপরও! তুমিও কিছুই কম যাও না! বলি, তোমার দল থেকে ওর দলে লোক যাচ্ছে, আসছে, পিকনিক করার ঢঙে যাতায়াত করিতেছে। ইহাতে দুই দল যে বাস্তবিক আলাদা, তাহাই বুঝা যায় না। তোমরা এরূপ করিলে শিবলোক টিঁকিবে কী করিয়া?
বিভীষণ দণ্ডবৎ হইয়া বলিলেন, আচ্ছা, আমি দলের চিন্তন বৈঠক ডাকিয়া সদস্যদের সতর্ক করিয়া দিব।
মহাদেব বলিলেন, তোমরা কে কী করিবে আমার জানা আছে।
দুইভাই কান মলিয়া বলিল, এবার থেকে আমরা শিবলোকের সম্মান রক্ষা করিতে সচেষ্ট থাকিব। অনুগ্রহ করে আপনি গাঁজার ছিলিমে ঠোঁট লাগান। নইলে সবই ভেস্তে যাইতেছে।
মহাদেব মনমরা হইয়া বলিলেন, এক ব্যাটা খিস্তিবাজ আমার গাঁজার ভাণ্ডার থেকে বেশ কিছুটা ঝেঁপে দিয়েছে। এতে আমার বড়ই মন খারাপ। সঙ্গে সঙ্গে রাবণ বলিল, না না, গয়া থেকে পুলিশ তাহাকে ধরিয়া আনিয়াছে। শীঘ্রই তাহার পিণ্ডি চটকাইব।
দেবাদিদেব বলিলেন, বুঝিয়া সুঝিয়া তাল রাখিয়া চটকাইয়ো। বেশি যেন না হইয়া যায়। শিবলোকের আইনের মর্যাদা রাখা দরকার।
রাবণ বিভীষণ দুইভাই তারকনাথকে প্রণিপাত করিয়া বিদায় লইলেন।