জন্ম- ১৯৬৭, বরানগর।
বর্তমানে দার্জিলিং জেলার মিরিক মহকুমার উপশাসক ও উপসমাহর্তা পদে আসীন।
চাকরীসূত্রে ও দৈনন্দিন কাজের অভিজ্ঞতায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সমস্যা সমাধানে তাঁর লেখনী সোচ্চার।
বৃহন্নলা কথা
৭
রামচন্দ্র জানতেন না। অনেকেই জানেন না। নারী ও পুরুষ এই দুই পরিচয়ের বাইরেও আরো নানাবিধ পরিচয় থাকা সম্ভব। কিন্তু মহা প্রাচীন ভারত জানত। এই সেদিন পর্যন্ত ভারতীয় দণ্ডসংহিতা বা আই পি সি, অর্থাৎইন্ডিয়ান পেনাল কোড বলেছেন নারীপুরুষ যৌনসংযোগ ছাড়া অন্য ধরণের যৌনক্রীড়া আইন বিরুদ্ধ। ভাষাকে আধা প্রাচীন বেশ পরিয়ে কোনো কূপমণ্ডুক বলেছেন – পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা । অথচ বাস্তবে নারী ও পুরুষ এই দুই সংখাগুরু যৌনপরিচয়ের আড়ালে আবডালে লুকিয়ে রয়েছে আরো কয়েক রকম যৌনঅস্তিত্ব । প্রকৃতি তাদের অমনি করেই গড়েছে। তাকে দোষ বললে চলবে কেন? শুধু তো মানুষ নয়, প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতেও অমন থাকে। “হারমাফ্রোডাইট” শব্দটি মনে পড়ে? এমন বহু প্রাণী আছে, যারা একই দেহে পুরুষ ও নারী। এমন প্রাণী আছে যে জীবনের প্রথম দিকে নারী, পরে পুরুষ । কিংবা, এমন প্রাণী আছে, যে প্রয়োজনে নিজের যৌন পরিচয় নতুন করে গড়ে নিতে পারে। হ্যাঁ, ওরা কিন্তু ইন্ডিয়ান পেনাল কোড এর প্রজা নয়। ওরা ভারতীয় দণ্ডসংহিতার আয়ত্তের বাইরে।
দোষ দেবার কথাটা আসে কেন? প্রকৃতি যে নিজের হাতে ওদের তৈরি করেছেন!
তাই জন্যে নির্বাসিত রামচন্দ্রকে যখন ক্রন্দনরত অনুরাগী প্রজাবৃন্দ নগরীর সীমা পেরিয়ে বিদায় দিতে এল, রামচন্দ্র বললেন, এবার যাও সকল নর ও নারী নিজ নিজ গৃহে ফিরে যাও। আমি রামচন্দ্র বলছি।
ফিরে গেল নারী প্রজা, ফিরে গেল নর প্রজা। পড়ে রইল তারা, যারা হারমাফ্রোডাইট, আধুনিক সেক্যুলার সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের লব্জে “তৃতীয়া প্রকৃতি” ।
তারা যে বুঝে পেল না তারা কি করবে, ঘরে ফিরে যাবে, না নগরের প্রান্তবাসী হয়ে থেকে যাবে। রাজা তো তাদের কিছু বলেন নি। সেই থেকে তারা সমাজ থেকে নির্বাসিত । সংখ্যালঘুকে যেমন করে তাড়িয়ে দেয় গণতান্ত্রিক দেশের অসম ব্যবস্থা।