দৈনিক ধারাবাহিকে মৃদুল শ্রীমানী

জন্ম- ১৯৬৭, বরানগর। বর্তমানে দার্জিলিং জেলার মিরিক মহকুমার উপশাসক ও উপসমাহর্তা পদে আসীন। চাকরীসূত্রে ও দৈনন্দিন কাজের অভিজ্ঞতায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সমস্যা সমাধানে তাঁর লেখনী সোচ্চার।

বৃহন্নলা কথা 

দ্রুপদ রাজার কোনো পুত্র ছিল না। পুত্র লাভেচ্ছায় তিনি মহাদেবের তপস্যা শুরু করেন। মহাদেবের দায় ছিল অম্বার কোনো গতিকে কিছু একটা ব্যবস্থা করা। তিনি অম্বাকে নপুংসক হয়ে জন্মানোর কথা বলে রেখেছিলেন। এবার দ্রুপদ রাজা মহাদেবের তপস্যা শুরু করলে মহাদেব দ্রুপদের ঘরেই অম্বাকে গছিয়ে দেবার মতলব ভাঁজলেন। দ্রুপদ রাজাকে মহাদেব বললেন প্রথমে তোমার কন্যা হবে, পরে সে পুরুষ হবে। দ্রুপদ ও তাঁর স্ত্রী মহাদেবের আশ্বাস বাক্যকে ফেসভ্যালুতে নিয়ে কন্যাটিকে পুত্র হিসেবে প্রচার করেন, এবং পুত্র হিসেবে বড়ো করেন। ইনিই শিখণ্ডী। কিন্তু বাপ মা হিসেবে ওঁরা জানতেন নবজাতকের যৌন অস্তিত্বের বৈচিত্র্যের কথা। লিঙ্গপরিচয়ে সে যে ঠিক স্ত্রী নয়, এ কথা তো না বোঝার কথা নয়। শুধু মহাদেবের মতো হাই স্ট্যাটাসের দেবতা এই বাচ্চা পরবর্তী কালে পুরুষ হবে আশ্বাস না দিলে, তাঁরা হয় তো বাচ্চাটিকে বিসর্জন দিয়েই বসতেন। কেননা, সামাজিক গরিষ্ঠ যৌনচেতনা তৃতীয়া প্রকৃতির শিশুর অস্তিত্বের বিরুদ্ধে কাজ করে। পরিষ্কার হেজিমনির গল্প।
কিন্তু মহাদেবের আশ্বাস শিশুটির জীবনে আরেক বিপর্যয় ডেকে আনল। দ্রুপদের স্ত্রী এই সন্তানকে ভাবী পুরুষ হিসেবে ধারণা করে দশার্ণরাজ হিরণ্যবর্মার কন্যার সাথে বিবাহ দেন। বিয়ে দেওয়া সোজা। কিন্তু তৃতীয়া প্রকৃতির যৌনতার সাথে অন্য প্রকৃতির যৌনরুচির মিলমিশ একটা অসম্ভব ব্যাপার। জোড়াতালি দিয়ে সেটা সম্ভব নয়। হিরণ্যবর্মার কন্যা চুপ করে থাকবে কেন? সে যে রাজার মেয়ে। সে তো জানে দাপটের সাথে কথা বলার কৃৎকৌশল। অন্য রকম যৌনতার একটা মানুষকে তার যৌনজীবনের সাথে জড়িয়ে দেওয়াটা সে মেনে নিল না। কন্যার কাছ থেকে তার জীবনের অভাবিত সংকটের কথা জানতে পেরে হিরণ্যবর্মা দ্রুপদকে প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত করে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। সন্তানটি উপলব্ধি করে যে তার তৃতীয়া প্রকৃতির জন্যই যুদ্ধ হতে চলেছে, তার যৌনবৈচিত্র্যের জন্যই তার বাবা মায়ের এত লাঞ্ছনা।
সে মনের দুঃখে বনে গেল, সুইসাইড করে জীবনের জ্বালা জুড়াবে।

ক্রমশ…..

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।