• Uncategorized
  • 0

রবিবারে রবি-বার – এ মৃদুল শ্রীমানী

শিশুকন‍্যার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

জাতীয় শিশুকন‍্যা দিবস এলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতা আমায় খুব নাড়া দেয়। এটি তাঁর প্রৌঢ় জীবনের কবিতা, “হারিয়ে যাওয়া”।
আমি “পলাতকা” কাব‍্যগ্রন্থের হারিয়ে যাওয়া কবিতার বামীকে মনে করি। ছোট্ট একটি কন‍্যাশিশু। সে তার‌ই বয়সী খেলার সঙ্গিনীদের ডাক শুনতে পেয়ে একা একা সিঁড়ি দিয়ে নামছিল। অন্ধকার নেমেছে। মেয়ের হাতে প্রদীপ। প্রদীপে নগ্ন দীপশিখা। সেই সব দিনে নেহাত খুকিরাও বাড়িতে শাড়ি পরত। বামীও। দীপশিখাটি আঁচল আড়াল করে বামী নামছে সিঁড়ি বেয়ে। এমন সময়ে হঠাৎই ব‌ইল অবাধ্য হাওয়া, আর মেয়ের প্রদীপ গেল নিভে।
হাওয়া দিলে আঁচল আড়াল করেও দীপশিখাটি জ্বালিয়ে রাখা শক্ত। বড়োরাও পারেন না। বামী তো ছোট্ট একটি মেয়ে। সেই বয়সের খুকি আঁচল আড়াল করে উন্মুক্ত প্রদীপ নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছে কেন, এটাই যেন আজকের চোখে কঠিন প্রশ্ন। কিন্তু, বামী আঁচল আড়াল করে ঠিক সেই সাংঘাতিক বিপজ্জনক খোলা আগুন নিয়ে চলছে। আর যেতে যেতে তার প্রদীপখানি নিভে গিয়েছে।
মেয়ে ককিয়ে কেঁদে উঠলো। আলো যদি হঠাৎ নিভে যায়, তাও ঘরের ঘেরাটোপে নয়, বিপথে, তখন ভয় তো চেপে ধরেই। তেমন পরিস্থিতিতে বড়োদের‌ই ভয় ধরে। বামী তো নেহাতই শিশু। তার ভয় পাওয়া খুব স্বাভাবিক।
পলাতকা কাব‍্যগ্রন্থের এই হারিয়ে যাওয়া কবিতায় এই ছবিটি খুব সহজ সরল। খুকির বাবা ছিলেন ছাতে। চৈত্রমাসের সন্ধ্যায় খুকির বাবা তারা ভরা আকাশের নিচে কি সব আকাশ পাতাল ভাবতে ভালবাসেন। সহসা মেয়ের ভয় জড়ানো গলার কান্না শুনে বামীর বাবা সচকিত হলেন। মেয়ের সাড়া নেবেন বলে জিজ্ঞেস করলেন, তার কি সমস্যা হয়েছে।
ছোট মেয়েটা বাবার খোঁজ করার উত্তর ,হিসেবে অদ্ভুত একটা কথা বলবে। বামী বলল, “হারিয়ে গেছি আমি”। ওইখানেই কবিতা ছলকে উঠল। মেয়ে বলতে পারত, বাবা, আলো নিভে গিয়েছে। ভয় পাচ্ছি। মেয়ে বলতে পারত, অন্ধকারে পা ফেলতে পারছি না। তুমি আমাকে হাত ধরে এগিয়ে দাও।
বামী কিন্তু এ রকম কিছু বলল না। বলল, হারিয়ে গেছি আমি। আর ওখানেই জেগে উঠল কবিতা। বামীর বাবা, ভাবুক লোকটি, তারায় ভরা চৈতালি আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে ওই ‘হারিয়ে গেছি আমি’ কথাটুকু অসামান্য মাত্রায় শুনতে পেল।
গোটা চৈতন্যময় জগৎ বামী হয়ে কেঁদে ওঠে ‘হারিয়ে গেছি আমি’। শিশুকন‍্যারা যে দেশে ঘরে বাইরে সাংঘাতিক আক্রমণের শিকার, যে দেশে ছলে বলে কৌশলে কন‍্যাভ্রূণ হত‍্যা ঘটে চলেছে, সেখানে বামীর ওই কথাটা আমার চেতনার মর্মমূলে জোর ধাক্কা দেয়। বামীরা কি হারিয়ে যাবেই?
আমরা কি চেয়ে চেয়ে দেখব?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।