|| মহান চিকিৎসক নর্মান বেথুন: জন্মদিনে স্মরণলেখ || মৃদুল শ্রীমানী

মহান চিকিৎসক নর্মান বেথুন

বিশ্বজোড়া জনস্বাস্থ্য আন্দোলনে নর্মান বেথুন ( ৪ মার্চ ১৮৯০ – ১২ নভেম্বর ১৯৩৯) এক নক্ষত্রপ্রতিম ব‍্যক্তিত্ব। সমস্ত মানুষ, যে কোনো সাধারণ মানুষ আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা সেবা পাবেন, এই মতবাদে ডাক্তার নর্মান বেথুন বিশ্বস্ত ছিলেন। ডাক্তার বেথুন কানাডার মানুষ। থোরাসিক সার্জন। তিনি রাজনৈতিক জগতের বাইরের লোক ছিলেন না। তিনি ছিলেন কানাডার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। স্পেনে গৃহযুদ্ধ বাধলে তিনি রিপাবলিকান গভর্ণমেন্টের ডাকে সেখানে যান। রণাঙ্গনে কিভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া সেনাকর্মীকে উদ্ধার করে তুলে এনে চিকিৎসা সেবা দিতে হবে, সে ব‍্যাপারে তিনি গভীর উদ‍্যোগ নিয়েছিলেন। মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিট সংগঠিত করেছিলেন। শল‍্যচিকিৎসার নানাবিধ যন্ত্রপাতি ও সাজসরঞ্জাম তৈরিতেও ডাক্তার বেথুনের অবদান ছিল। আর তার আরো বড় ভূমিকা ছিল রক্তদানে। আহত সৈন্যদের রক্তমোক্ষণজনিত দুর্বলতা মারাত্মক হয়ে ওঠে। তাকে সারিয়ে তোলার গুরুত্বপূর্ণ একটি পথ হল রক্তদান। এই রক্তদানের বিষয়টিকে জনপ্রিয় করে তুলে, রক্তসংগ্রহ কেন্দ্র থেকে নিরাপদে সুষ্ঠুভাবে রক্ত দরকারি জায়গায় পৌঁছনোর ব‍্যাপারে তিনি ভূমিকা পালন করেছিলেন।
চীনের কমিউনিস্ট বিপ্লবেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। চীনের কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা যখন আগ্রাসী জাপানি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছে, সেখানে তিনি আহত চৈনিক সৈনিকদের শল‍্যচিকিৎসার সুব‍্যবস্থা করেছেন। এমনকি এমন একটি শল‍্যচিকিৎসার সময় তিনি নিজের একটি আঙুল কেটে ফেলেন। বহুদিন ধরেই ভাল খাওয়া দাওয়া ও বিশ্রাম জুটত না বলে ঊনপঞ্চাশ বছরেই বেথুনের শরীর জীর্ণ হয়ে পড়েছিল। সেপ্টিসিমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এই মহান মানবতাবাদী ন‍্যায়পরায়ণ চিকিৎসক প্রাণ বিসর্জন করেছিলেন। তারিখটা হল ১২ নভেম্বর, ১৯৩৯।

বেথুনকে তাঁর জন্মভূমি কানাডা ভোলে নি। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ‍্যোগে ডাক্তার নর্মান বেথুনের স্মরণে একটি বার্ষিক আন্তর্জাতিক শল‍্যচিকিৎসা কনফারেন্স হয়। নাম তার বেথুন রাউণ্ড টেবল। ১৯৯৮ থেকে অন্টারিওতে কানাডিয়ান হল অফ ফেম এ বেথুনের স্মারক প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। ১৯৭২ থেকে কানাডাতে তিনি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ব‍্যক্তিত্ব হিসেবে সম্মানিত। চীনেও ডাক্তার নর্মান বেথুন অত‍্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর প্রবীণ বয়সে কানাডার প্রতি কবিতা লিখেছেন। সেই কবিতায় যুদ্ধক্লিষ্ট মানুষের জন‍্য কানাডিয়ান এই উদ‍্যোগের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।