জন্মদিন উপলক্ষে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন: নীলস বোর – লিখেছেন মৃদুল শ্রীমানী

আজ অক্টোবর ০৭, বিজ্ঞানসাধক নীলস বোর এর জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে পরমাণু বোমাকে শান্তি স্থাপনের কাজে ব‍্যবহার করতে এবং সারা পৃথিবীতে শক্তি শিবিরগুলির মধ্যে একটি ভারসাম্য খুঁজতে বিজ্ঞানী নীলস বোর তাঁর ভূমিকা পালন করেছিলেন।
পরমাণুর গঠন কী রকম তা নিয়ে জোসেফ জন টমসন এবং আর্নেস্ট রাদারফোর্ড গুরুত্বপূর্ণ ব‍্যাখ‍্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও পরমাণুর নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রককে ঘিরে বিভিন্ন কক্ষে পরিক্রমারত ইলেকট্রনগুলির একটি কক্ষ হতে উচ্চতর শক্তি কক্ষে যাওয়ার বিষয়টি নীলস বোর (১৮৮৫ – ১৯৬২) বিজ্ঞান জগতে তুলে ধরেন। পরমাণুর গঠন এবং তার অভ‍্যন্তর থেকে বিকিরণ বিচ্ছুরণ, এই বিষয়টি নিয়ে ১৯২২ সালে নীলস বোর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। পরমাণুর অভ‍্যন্তর থেকে এই শক্তি বিচ্ছুরণের সূত্রে সূত্রে তদানীন্তন বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, পল ডিরাক, আর‌উইন শ্রয়ডিঞ্জার, ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ, জেমস চ‍্যাড‌উইক ও রিচার্ড ফাইনম‍্যান সহ অনেকের সাথে তাঁর মতবিনিময় হয়েছিল। বিশ্বশান্তির লক্ষ্যে আমেরিকার পারমাণবিক পরীক্ষা নিরীক্ষা বিষয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে তথ্য আদানপ্রদানে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫০ সালে পারমাণবিক শক্তির মানবিক প্রয়োগের স্বার্থে তিনি রাষ্ট্রসংঘকে আবেদন করেন। ওইসময়েই তাঁর পরামর্শে ইন্টার ন‍্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৭ সালে নীলস বোর ‘অ্যাটমস ফর পিস’ পুরস্কার লাভ করেন।
নীলস বোর চেয়েছিলেন বিশ্ব জুড়ে শক্তির ভারসাম্য। বিপক্ষ মানেই তাকে শেষ করে দেওয়া কখনোই মানবিকতার নিদর্শন হতে পারে না, এমন একটি বার্তা তিনি দিতেন। তিনি বলতেন, বিপরীত পক্ষগুলিকে সমঝোতামূলক অবস্থান নিতে হবে।
১৮৮৫ সালে আজকের দিনে তিনি ডেনমার্ক এর কোপেনহেগেনে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৬২ সালের ১৮ নভেম্বরে ওই কোপেনহেগেনেই প্রয়াত হন।১৯২০ সালে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ইনস্টিটিউট অফ থিয়োরিটিক‍্যাল ফিজিক্স প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর প্রয়াণের পর,  ১৯৬৫ সালের ৭ অক্টোবর, তাঁর আশিতম জন্মদিনে মরণোত্তর স্বীকৃতি হিসাবে ওই প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়, “নীলস বোর ইনস্টিটিউট”। এই বিজ্ঞানসাধক একটি নূতন মৌলের অস্তিত্বের সম্ভাবনা প্রকাশ করে, তার নাম দেন “হ‍্যাফনিয়াম”, এবং ওইভাবে স্বদেশানুরক্ত বিজ্ঞানসাধক তাঁর জন্মস্থান কোপেনহেগেনকে সম্মান জানিয়েছেন। কেননা, ওই নামে তাঁর জন্মস্থানের লাতিন নামটি মিশে আছে। পরে বিজ্ঞানীর সম্মানে ওই মৌল পদার্থের নাম রাখা হয় “বোরিয়াম”।
এই মহৎ জ্ঞানসাধক বহু গুণী মানুষকে নাৎসিদের অত‍্যাচার থেকে বাঁচানোর কাজ করে গিয়েছেন। হিংস্র জার্মানরা এই বিজ্ঞানীকে বন্দী করতে চেয়েছিল, কিন্তু বোর গোপনে দেশত্যাগ করে পালিয়ে বিশ্বশান্তির লক্ষ্যে কাজ করে গিয়েছেন। তাঁর মধ্যে “কমপ্লিমেনটারিটি” , এক‌ই সাথে বিরোধাত্মক অস্তিত্বের সমঝোতামূলক অবস্থান বৈজ্ঞানিক ও মানবিক দর্শনে মূর্তি পরিগ্রহ করেছিল।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।