একদিন শুধালে জীবন ইরুমাসিকে,
“যাবি? জীবনের ওই পারে?
সেখানেও ঘাস সবুজ, আকাশ নীল
পাখি ও প্রজাপতি আকাশে ওড়ে ”
“কিন্তু জীবনের ওই পারে তো মৃত্যু,
আর যদি না পারি ফিরতে?”
নিঃশ্বাস হাসে,
“তবে থেকে যাবি মরণের সাথে “।
ইরুমাসি খুলে ফেলে তর্কের ঝুলি—-
” আমার পোষা পায়রার দল?”
“উড়ে যাবে একদিন ঠিক,
অপেক্ষায় বসে থাকলে জীবন অচল “।
“রমলাদির বাড়ীতে আমাদের বিকেলের
গল্পের আসর?”
“পেয়ে যাবে অন্য কাউকে ঠিক আবার,
জায়গা খালি থাকে না বেশি দিন,
জুটে যায় সবার দোসর “।
আমার ছাদের বাগানের হাস্নুহানা,
গুলন্চ অথবা বোগেনভিলা?
বেলীগাছে সবে ফুটেছে ফুল
একটি কি দুটি”
“মরে যাবে একদিন,
বাঁচে কি শিকড় বেশি দিন
যদি না পায় জল অথবা মাটি?”
“এই যে আমার পড়শিরা সব,
যারা নিজের বলে জেনেছে আমাকে
এবং আমি তাদের। ”
“কয়েকদিনের শোক আর স্মৃতি,
ভুলে যায় সবাই কিছুমাস পর”।
” এই যে আমার দীর্ঘ জীবনের এত জমা ও পুঁজি?
ছেড়ে যাব সব অমনি? এক কথায়?”
“গোটা কয়েক তোরঙ্গ,
কিছুখান শাড়ী, জামা, সোয়েটার, শাল।
এক জীবনে জমানো যেত অনেক কিছুই ,
কিন্তু জমল কোথায়?”।
“এই যে আমার ঠাকুর ঘর?
ফুল, মালা, ধূপ ধুনো আর জপের মালা?”
“তাদের নিয়ে তুই বেঁচেছিলি,
তারা তোকে নিয়ে নয়”।
জীবন হেসে শুধায় আবার,
“যাবি তবে?”
ইরুমাসি বেজে ওঠে ঝনঝন শব্দে ।
“সময় চাই আরও অনেক,
বাকি আছে এখনও অনেক কিছু,
এখনও হয়নি অনেক গল্পশোনা,
এখনও হয়নি দেখা গুলন্চের ফুল ফোটা,
এখনও হয়নি পরা সেই ঢাকাই শাড়ীখানা,
এখনও হয়নি শেষ পড়শিদের সাথে কথা বলা”।
ফিরে যেতে যেতে হেসে বলে জীবন,
“তবে তাই হোক,
অপেক্ষায় থাকি না কোথাও বেশিক্ষণ ।
যাব অন্য কারো কাছে
যে ধরবে আমার হাত ভালোবেসে,
নিয়ে যাব জীবনের অন্য পারে
নদী, উপত্যকা আর পাহাড় চেনাবো তাকে হাত ধরে ।
মনে রাখিস,
মৃত্যুর কঠিন হৃদয়—
যেদিন আসবে , কথা বলার রাখবে না অবকাশ,
নিয়ে যেতে যেতে দেখাবে না ভোরের আকাশ”।
—————————-
মাস ছয় পর,
মৃত্যু এসেছিল
অপেক্ষা করেছিল মাত্র দু’দিন
বলেছিল শুধু, ” যেতে হবে”।
অতিশয় নির্দয় হাতে
টেনে তুলেছিল মৃত্যু-গন্ধে ভরামরণের রথে,
“যাচ্ছো কোথায় নিয়ে?
আমার পোষা পায়রার দল,
ছাদের বাগানে গুলন্চের ফুল,
পড়শিদের বোনাতে শেখাচ্ছিলাম নকশি কাঁথা,
দর্জির বাড়ী পড়ে আছে ঢাকাই শাড়ী খানা”
শান্ত কঠিন কন্ঠে,
মৃত্যু শুনিয়েছিল নিদান,
” কথা বলার বা শোনার নাই অবকাশ,
আমি নই জীবনের মতন”।