গুচ্ছ ছড়া-কবিতায় মালিপাখি 

১। উড়ান

পাতা তোকে চুমু খাই ! চুমু ! তারা গুলো জ্বলে মিটি মিটি !
কোনো হুঁশ নেই ! ঘাড় গুঁজে লিখি শুধু চিঠি আর চিঠি — !
পাতা তোকে চুমু খাই ! চুমু ! তোর বুকে গড়েছি যে বাড়ি !
কেন ? কোনো এক কিশোরীর চোখে যদি পাখি হতে পারি !
ঘাস ! তুমি ভালো আছো ? দ্যাখা করা ভুলে গেছি ? তাই বুঝি ?
বেশ , তবে আজ এই রণসাজ পরে বলো কাকে খুঁজি ?
মাঝে মাঝে রাঙা হাঁস সেজে , পালকের রঙ রোদে নাড়ি !
কেন ? কোনো এক কিশোরীর চোখে যদি আলো হতে পারি !
নদী তোকে ভালোবাসি ! নদী তোকে আলোমাসি বলে ডাকি !
ডেকে , ডেকে ছুটে যাই ! রাত ভোর তোর কোলে শুয়ে থাকি !
শুয়ে , শুয়ে তারা নাম লিখি ! ঘেমে গেলে হই মরুচারী !
কেন ? কোনো এক কিশোরীর চোখে যদি নদী হতে পারি !
মরীচিকা ! মরি মরি ! হুলো রাজা , মিনি পরী, ওড়া বুলি !
এসো এসো ফিরে এসো ! হীরে এসো , চুনী এসো মুঠো খুলি !
মুঠো খোলো ! খুলে বাঁধো তাকে ! চলো পথ, চলো মেধা সারি !
কেন ? কোনো এক কিশোরীর চোখে যদি ভাষা হতে পারি !

২। আমি জেগে দেখি

আকাশের বোন নীল ঢেলে বলে
সামনে কে ?
দোপাটির চারা বেড়ে বেড়ে জলে
নাম লেখে !!
আকাশের ভাই হুস্‌ করে যায়
হাঁস এঁকে !
পাহাড়ের চূড়ো সেই চিঠি পায়
ঘাস থেকে !!
চারিদিকে মায়া , হও তার মানে
চুপ যদি !
জলছবি আঁকে কবিতায় , গানে
রূপ নদী !!
ডিঙি গুলি ভাসে সোনা নদীটার
কূল ধরে !
আমি জেগে দেখি রামধনু হার
ফুল ভোরে !!

৩। সাথী

পাগল ছেলে ! শোনায় কেরে
একলা নাকি তুই ?
আঁধার ঘরে কাঁদিস বসে –
আয়না তোকে ছুঁই !
গেছিস বুঝি পাথর হয়ে ,
নেইকি মনে বল ?
ছোটার তেজি সাহস নিয়ে
সামনে হাঁটি চল — !
কাঁসাই আছে , তিতাস আছে ,
মেঘনা আছে আর ;
বাঁধার পাহাড় থাকনা যতো
থাকনা যতো ভার — !
আঁধার কেটে দু দিন বাদে
উঠবে নেচে বুক !
বিজয় মালা সবাই দেবে
দেখবি কতো সুখ !
এই ছেলেটি আয়না কাছে
আয়না সাথী হই !
এইনে হাতে ছড়ার দেশের
সাতটা খুশির বই !

৪। টাপুর-টুপুর

মেঘরা এখন জল টুপ — টুপ মেঘরা এখন জল —
চল ছুটে যাই নামতা পাড়ায় । নামতা পড়ি চল ।
ঝলমলানো পোষাকটি বেশ । বাজায় কে শাঁখ মন ?
বুলবুলি দেশ গান ধরেছে , পুঁতিরা সাত বোন !
তিনটি পুঁতি মাটির কুটির ! বাকিরা সব ফুল !
আয় জোনাকি , পাহাড়ী পথ ; নাচছে নদীর কূল — !
ধান ঝুর ঝুর , গান ঝুর ঝুর , বাজলো নুপুর যেই ;
জুঁই দরিয়া বললে হেসে – আরতো সময় নেই !
আর দেরি নয় , আর দেরি নয় ,নামতা পড়া যাক ।
তিন খানা ঘর । নামতা পড়ি । একশো তারার ঝাঁক — !
নামতা শুনে নাম ভুলে যায় । চরকি মনে তাই
সাজলো ভোরের শাপলা সানাই মেঘনা কুটুম ভাই !
মেঘনা পাগল , নামতা পাগল , আয়না ও মেঘ আয় — !
এই ছড়ালুম টাপুর-টুপুর — পানসি ভেসে যায়।

৫। শুভ হোক

কবি মানেই লোকটা পাগল । লোকটা বাজে লোক ।
কবি লেখেন আগামি দিন । সবার শুভ হোক ।
ওরা সবাই কি মেধাময় । চোখে মেধার ঘোর ।
কবি খোঁজেন রূপকথা আর নতুন আলোর ভোর ।
ওরা সবাই নেয় কেড়ে নেয় কবির সকল মান ।
পাতায় পাতায় কবি ছড়ান ভালোবাসার গান ।
ওরা সবাই নিজে বাঁচে । পোড়ায় কবির মুখ ।
কবি লেখেন পারুল, পলাশ সবাইকে দাও সুখ ।
ওরা সবাই খুশির পাহাড় । ওরা সবাই বীর ।
ওদেরতো নয় , ওদের কাছে কবির নত শির ।
কবির গায়ে ছড়ায় ওরা মেধার কালো ছাপ ।
কবি বলেন ও দয়াময় , দাও ধুয়ে সব পাপ ।
কবি একাই পথের পথিক । ইতিহাসের দাস ।
মাথা দোলায় গোলাপ , টগর , সবুজ কচি ঘাস ।
কবি মানেই লোকটা পাগল । লোকটা বাজে লোক ।
কবি লেখেন আগামি দিন । সবার শুভ হোক ।

৬। ফুল হয়ে যাই

ঝরনা পাতায় রঙের বাড়ি ,
দু-একটা রঙ তাই কুড়ালাম ।
কেউ বা শালিক কেউ বা ফিঙে ,
এই নিয়ে এক রূপকথা গ্রাম ।
পাহাড় ছুঁয়ে শীতল হাওয়ায়
কোলাজ আঁকে নীল দুটি চোখ ।
পাতায় পাতায় পথের মিছিল —
কেউ বা দোয়েল কেউ বা চাতক ।
ঢেউ বয়ে যায় ঘাসের ডগায় —
নাম লেখে এক ফুল ঘোড়া তার ।
বাউরি বাতাস আপন মনে
সুর বোনে রোজ চুমকি পাতার ।
মেঘনা মেঘের হাতছানিতে
অনুভূতির বীজ ওড়ে তাই
অলীক ভূবন কেবল ভাবে
মাঠ পেরিয়ে ফুল হয়ে যাই ।

৭। মায়াতরু

গাছটি যেন নদী ,
দেয় ছড়িয়ে প্রীতির মোহর একলা এদিক ওদিক !
গাছটি যেন তারা ,
ভালোবাসার ফুল বুনে দেয় রোজ আমাদের পাড়ায় !
গাছটি যেন পাখি ,
শুধুই বলে ও ভাই তোরা সবাই সুখে থাকিস !
গাছটি যেন বাঁশি ,
বাজতে বাজতে দেয় ছুঁয়ে মন পাগলি রাঙামাসির !
গাছটি যেন ঘোড়া ,
ছুটতে ছুটতে পথ গুলো রোজ রূপকথাতে মোড়ায় !
গাছটি যেন আশা ,
আমাকে রোজ ভুবন ডাঙার ওড়না মেঘে ভাসায় !
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।