সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে মৌসুমী নন্দী (যাপন চিত্র – ৩৯)

যাপনচিত্র – ৩৯

“অটোফেজি” বা “উপবাস করে কি লাভ ?

আজকালকার যুগে সবাই ফিগার সচেতন ৷ তবুও কিছু মানুষকে সবসময় তার বডিসেমিংএর স্বীকার হতে হয় ৷ মোটা হলে এত মোটা কেন আর রোগা হলে এত রোগা কেন ৷ কোনো কিছুতেই শান্তি নেই ৷ রোগা বা মোটা দুটোই খাবারের উপর নির্ভর করে না কেউ অনেক খাবার বা চারবেলা ভাত খেয়েও মোটা হন না আবার কেউ জল খেলেও মোটা হয়ে যান ৷ এছাড়াও কিছুটা হেরিডিটি বা কিছু রোগ হলেও রোগা মোটার ধাচ হয় ৷ কেউ আবার ডিপ্রেশনে মোটা হন কেউ ডিপ্রেশনে রোগা ৷ তবে প্রপার ডায়েট চার্ট মেনে কিছু ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম ও একটু হাঁটাহাঁটি করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ৷ অনেকে কিটো ডায়েট করেন , অনেকে বা ফাস্টিং করেন ৷আসুন জেনে নিই ফাস্টিং বা উপবাস বা অটোফেজি আসলে কি , আর এটা করলে কি হয় ৷
হিন্দু বা বৌদ্ধরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয় “উপবাস”। খ্রিস্টানরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয় ‘’ফাস্টিং”।মুসলিমরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় “সিয়াম”।বিপ্লবীরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয় ‘’অনশন”।আর, মেডিক্যাল সাইন্সে উপবাস করলে, তাকে বলা হয় “অটোফেজি”।
২০১৬ সালে নোবেল কমিটি জাপানের ডাক্তার
‘ওশিনরি ওসুমি’-কে অটোফেজি আবিষ্কারের জন্যে পুরষ্কার দেন ।
যাই হোক, ‘Autophagy‘ কি ?
Autophagy শব্দটি একটি গ্রিক শব্দ ।
Auto অর্থ নিজে নিজে এবং Phagy অর্থ খাওয়া ।
সুতরাং, অটোফেজি মানে নিজে নিজেকে খাওয়া ।
মেডিক্যাল সাইন্স থেকে জানা যায়, শরীরের কোষগুলো বাইরে থেকে কোনো খাবার না পেয়ে, নিজেই যখন নিজের অসুস্থ কোষগুলো খেতে শুরু করে, তখন মেডিক্যাল সাইন্সের ভাষায় তাকেই অটোফেজি বলা হয়।আরেকটু সহজভাবে বলি –
আমাদের ঘরে যেমন ডাস্টবিন থাকে, অথবা আমাদের কম্পিউটারে যেমন রিসাইকেল বিন থাকে, তেমনি আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের মাঝেও একটি করে ডাস্টবিন আছে ।সারা বছর শরীরের কোষগুলো খুব ব্যস্ত থাকার কারণে, ডাস্টবিন পরিষ্কার করার সময় পায় না। ফলে, কোষগুলোতে অনেক আবর্জনা ও ময়লা জমে যায় ।শরীরের কোষগুলো যদি নিয়মিত তাদের ডাস্টবিন পরিষ্কার করতে না পারে,
তাহলে কোষগুলো একসময় নিষ্ক্রিয় হয়ে শরীরে বিভিন্ন প্রকারের রোগের উৎপন্ন করে। ক্যান্সার বা ডায়াবেটিসের মতো অনেক বড় বড় রোগের শুরু হয় এখান থেকেই। মানুষ যখন খালি পেটে থাকে, তখন শরীরের কোষগুলো অনেকটা বেকার হয়ে পড়ে। কিন্তু তারা তো আর অলস হয়ে বসে থাকে না, তাই প্রতিটি কোষ তার ভিতরের আবর্জনা ও ময়লাগুলো পরিষ্কার করতে শুরু করে দেয় ।
কোষগুলোর আমাদের মতো আবর্জনা ফেলার কোন জায়গা নেই বলে, তারা নিজের আবর্জনা নিজেই খেয়ে ফেলে। মেডিক্যাল সাইন্সে এই পদ্ধতিকে বলা হয় অটোফেজি।
শুধুমাত্র এই জিনিসটা আবিষ্কার করেই জাপানের, ওশিনরি ওসুমি (Yoshinori Ohsumi) ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কারটা পেয়ে গেলেন ।
তিনি আবিষ্কার করেন যে ১২-২৪ ঘন্টা উপবাস রাখলে মানুষের দেহে অটোফেজি চালু হয়।
তিনি প্রমান করেন যে, উপবাস থাকার মাধ্যমে মানুষের নিম্নলিখিত উপকার গুলো হয়-
১| দেহের সেল পরিস্কার হয়।
২| ক্যান্সার সেল ধ্বংস হয়।
৩| পাকস্থলীর প্রদাহ সেরে যায়।
৪| ব্রেইনের কার্যকরীতা বাড়ে।
৫| শরীর নিজে নিজেই সেরে যায় (Autophazy)।
৬| ডায়াবেটিস ভালো হয়।
৭| বার্ধক্য রোধ করা যায়।
৮| স্থূলতা দূর হয়।
৯| দীর্ঘ জীবন লাভ করা যায়।
কিছু তথ্য গুগুল থেকে জেনেছি ৷ যদি এই তথ্যগুলো আপনাদের সকলের কাজে লাগে তবে লেখাটা সার্থক হবে ৷ সকলে খুব ভালো থাকবেন ৷সকলের জন্য রইল শুভ জন্মাষ্টমীর প্রীতি শুভেচ্ছা ৷
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।