কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল দেশ বিদেশের বিখ্যাত স্মৃতিসৌধেরএকটি।
শ্বেত পাথরে,ইতালীয় ও মোঘল স্থাপত্যে আগাগোড়া মোড়া,মহারানী ভিক্টোরিয়ার নামাঙ্কিত।
নিরমাণ শুরু 1906,সম্পূর্ণ হয় 1921
বেলফাস্ট সিটি হলের আদলে নকশা প্রস্তুত করেন উইলিয়াম এমারসন।
ভিক্টোরিয়ার উত্তরে কুইন্স ওয়ে, ডানসিং ফাউন্টেন,তারপর বিশাল ব্রিগেড প্যারেডগ্রাউন্ড।
দক্ষিণ দিকে আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বোস রোড, আর সুবিখ্যাত পি.জি. হাসপাতাল।
পূর্বে সেন্ট পলস্ ক্যাথিড্রাল চার্চ, বিড়লা তারা মন্ডল।
পশ্চিম দিকে আকাদেমী অফ ফাইন আর্টসএবং কলকাতার সুবিখ্যাত সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র রবীন্দ্র সদন।
আরো পশ্চিমে রেসকোর্স ময়দান।
এই তো গেল ভিক্টোরিয়ার বাহ্যিক রুপ, এবার অন্দরে যাওয়া যাক।
রানী ভিক্টোরিয়ার এ্যালবার্টকে প্রেমের কথাটি বোধ হয় কেমন করে জেনে যায় সৌধটি, তাই তো তার আনাচে কানাচে প্রেমের যুগল কপোত কপোতি যুগ যুগ ধরে ভিক্টোরিয়ায় কুজনে মত্ত থাকে।
উত্তর ফটক থেকে ভিক্টোরিয়া ভবন পর্যন্ত চওড়া রাস্তার দুদিকে দুটি প্রকান্ড জলাশয় কাটা আছে,পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য।
চমৎকার এই বিশাল উদ্যানে বড় বড় গাছের কান্ডের ফাঁকে ফাঁকে নানা বয়সী প্রেমিক প্রেমিকা জোড়ায় জোড়ায় বসে যন্ত্রণার দুনিয়া থেকে একটু দূরে নিরিবিলিতে একটু উষ্ণতার জন্য আসে এখানে।
কলকাতা ও তার আশে পাশের এমন কোনো প্রেমিক প্রেমিকা নেই যে একবার ভিক্টোরিয়ার আলো আঁধারির প্রেম না মেখেছে গায়ে।
আজ অনেকেরি মোটা লেন্সের আড়ালে ,সকালের প্রেম গাঁথা মাখা সাক্ষী ভিক্টোরিয়ার গাছেদের ছায়া ।
কত বা সিদ্ধ হয়েছে ,কতক বা কবিতা হয়ে হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ে বেড়াচ্ছে,ভিক্টোরিয়ার আকাশে।
কলকাতার আশে পাশে বা দূরান্ত থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছেলে মেয়ে কলেজ পদার্পন বেলায়, কলেজ কেটে এখানে আসবেই, সে যুগলে হোক, বা দল বেঁধে।
ভিক্টোরিয়ার জোড়া শালিক, যতনা ঘেঁটেছে ভূগোল ইতিহাস, অনেক বেশী ছুঁয়েছে নির্জন প্রেম।
ভিক্টোরিয়ার নীচের ঘরটি কুইন্স হল,নীচ থেকে ঘোড়ানো সিঁড়ি ওপরে চলে যায়।
ওপরের পোর্টিকোতে বারটি বেশ বড় আকারের, ক্যানভাসে আঁকা,মহারানী ভিক্টোরিয়ার জীবনী চিত্রিত আছে,তৈল চিত্রে।
1837 থেকে 1901অব্দি বিখ্যাত ব্রীটিশ চিত্রকর ফ্রাঙ্ক সলিসবারির সুনিপূণ আঁকায় ধরা আছে।
সে সময়কার রাজকীয় জীবন যাত্রা,সামরিক ও রাজকর্মচারীদের পোষাক আশাক ভিক্টোরিয়া কালের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল সাক্ষর বহন করছে।
সর্বোপরি বিউগল ধারিনী কালো পরী ব্রোন্জ মূর্তিটি সৌধের একেবারে ওপরে অবস্থিত, জোর হাওয়ার সাথে সাথে পরীটি নড়ে ওঠে, অবশ্য মাঝে মাঝে অভিমানিনী প্রেমিকার মত নড়াচড়া বন্ধ করে, আবার ভালবাসার তদ্বিরে অভিমান ভুলে নেচে ওঠে পরীটি আবহমান কালের প্রেমের সাক্ষর বয়ে।
ভিক্টোরিয়ার গাছের পাতায় পাতায় দিঘির কালো জলে যুগে যুগে প্রেম লেখা থাকে অবিনশ্বর।