কর্ণফুলির গল্প বলা সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে মনিরুল ইসলাম (পর্ব – ৮)

রাজলক্ষ্মী

কলিমুদ্দিন ও কমলার প্রেমের খবর কলিমুদ্দিন এর বাবা সাত্তার মোড়লের কানে পৌঁছালো। বাড়ির কাজের লোকের মেয়ের সাথে ভাব ভালোবাসা এ কোনমতে মেনে নেওয়া যায় না। সাত্তার মোড়ল হাতেমালি কে ডেকে ধমক দিয়ে বলল- তুমি কি জানো, তোমার মেয়ে আমার ছেলের মাথাটা নষ্ট করছে।
-মুরুব্বি কমলা অনেক ছোটো।তাই হয়তো ভুল করে ফেলেছে।আমি ওর হয়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এরকম আর কোনদিন হবে না।
– আমি তোমার কথা মতো এবারটা ক্ষমা করে দিচ্ছি। এমন যেন আর কোনদিন না হয়।
– জী।আর কোন দিন হবে না।
হাতেম আলি বাড়ি ফিরে এসে সব বলে। কমলা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সব শনে। খুব কষ্ট পায় কিন্তু প্রতিজ্ঞা করে এমন ভালোবাসায় দরকার নেই, যেখানে আমার বাবাকে অপমানিত হতে হয়।
কমলার মা কমলাকে ডাকে। কমলা ভয়ে ভয়ে বাবার সামনে আসে। কিছু বলার আগে কাঁদতে কাঁদতে বলে আমার ভুল হয়ে গেছে মা,তোমারা আমাকে ক্ষমা করে দাও।
কমলার দাদি বলে- ওদের ছেলে কি কচি খোকা। সেই তো গায়ে পড়ে ভালোবাসা করলো।
– থামোনা মা।আমরা গরিব মুরুব্বির বাড়ি কাজ করে খাই।ওরা কেন আমার মেয়েকে বাড়ির বউ করবে।
– তাই বলে –
কমলা মা আমার তুই এসব ভুলে যা।
তোমরা যা চাইবে তাই হবে মা।
সেদিন না খেয়ে যে যার মতো বিছানায় শরীর ছড়িয়ে দিলো।
ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের মতো যে যার কাজে লেগে পড়লো।কমলা ও প্রতি দিনের মতো পড়তে গেলো স্কুল করলো।বাড়িতে ফিরে এলো।এই ভাবে চললো কিছু দিন। একরকম পালিয়ে পালিয়ে চলতে৷ লাগলো কমলা।
এদিকে কালিমুদ্দি ও অস্থির হয়ে উঠলো।কমলার সাথে কথা বলার কোন সুযোগ পাচ্ছে না সে।
দেখতে দেখতে রোমজান মাস চলে এলো।গ্রামের মানুষরাএকটু বেশি ধর্মপ্রান হয়।স্বাভাবিক ভাবে কমলা ও কালিমুদ্দি দুজনেই রোজা করছে।আজ পনেরো রোজা।কমলা স্কুলে গেলো।কালিমুদ্দি বি ডি ও অফিসে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বার হলো।স্কুলের টিফিন টাইমে দেখা করে জিজ্ঞেস করল –
– কি হয়েছে তোমার? আমার সাথে এরকম করছো কেন?
– দেখো আমরা গরিব,তোমার সাথে আমার ভালোবাসা মানায়না।
বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো কথা গুলো বলতে,চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।
– কি হয়েছে তোমার?
তোমার বাবা আমাকে তোমার সঙ্গে মিশতে নিষেধ করেছে।
একথা তুমি এতদিন আমাকে বলোনি কেন?
আমার বাবা অপমানিত হবে তাই।
তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।