সাপ্তাহিক রম্য সাহিত্যে মন্দিরা হাজরা (বসু) (পর্ব – ২)

কর্ণ পর্ব

“কান” দিয়ে যায় চেনা!

কোথ্থাও কিচ্ছু নেই , কিন্তু একদা এক জ্যৈষ্ঠের ঈষদুষ্ণ বিলিতি বিকালে আমার ডান দিকের শ্রবণ যন্ত্রটি আচমকা জবাব দিয়ে বসে ।  কিছুক্ষণ পারিবারিক হাহুতাস করার পর আমাকে মধ্য রাত্রে এন এইচ এস এর শরণাপন্ন হতে হয় । সে যাগ্গে, যা বলছিলাম, আমার শ্রবণেন্দ্রিয় দুটি জন্মাবধি আমার যাবতীয় দুষ্কর্মের সাথী হয়ে এসেছে । সেটি দাম্পত্য বিশ্রম্ভালাপের সময় অপর পক্ষের যুক্তি গুলি শুনে নিয়ে আমমুহূর্তে (অর্থাৎ ঘটনার ছয় মাস পর ) ক্যাঁক করে মনে করিয়ে দেওয়াই হোক অথবা  খেলনার দোকানের বিপদ জনক আইল গুলিতে আমার ক্ষুদে খোকাটির যাবতীয় আবদারের সময় সুবিধামত সুঈচ্ অফ্ করাই হোক না কেন ; মোটের কথা আমার কান দুটি আমার সকল অনুরোধে “কান” দিয়ে এসেছে । মে মাসের এক কালা দিবসে তাদের একজন  রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে বসলো ।

এরপর শুরু হলো আমার আর আমাদের এন এইচ এস এর কানামাছি খেলা । খেয়াল করবেন যে ঘন্টা  কয়েক ছাড়াছাড়া হাসিখুশি  হৃষ্ঠপুষ্ট সহসেবিকারা ( হেল্থ কেয়ার আসিসট্যান্ট ) এখানে স্বাস্থ্য  পরীক্ষা  করে  থাকেন । এঁয়াদের হাতে থাকে একটি বিপ  বিপ  করা  কানে  গোঁজার  থার্মোমিটার ।  প্রতি বার  কান এঁটো  করা  হাসি  সহযোগে  এনারা  শুধোতেন  ” হুঈচ  ইয়ার  ইজ্  নট্  সো  ব্যাড  সুঈটি ? ”
একটু  তলিয়ে  ভেবে  দেখলে  ব্যাপারটা রীতিমত আশঙ্কাজনক । মানে  যার এক কান  প্রায়  জবাব  দিই  দিই  করছে  তাকে  কোন  কানটা  বেশী  খারাপ  নয়  শুধোলে  মনে হয়  নাকি , যে  অন্যটারও  হয়ে  এলো  বলে !
খেপে খেপে  দুমাসাধিক  ভর্তি  থাকাকালীন  এই  পিলে চমকানো প্রশ্ন শুনতে শুনতে আমার বদ্ধমূল ধারনা হয়ে গেল যে হাসপাতাল থেকে বেরবার সময় আমি নিশ্চয় দু – কান কাটা (এবং ফলস্বরূপ কিছু  বন্ধুবিচ্ছেদ হলেও শত্রুদের থেকে ৷ একশত ভাগ সুরক্ষা গ্যারান্টি) হয়ে ফিরবো । হা ঈশ্বর , এই  হিতৈষিনীরা  হিতোপদেশ পড়েন  নাই ;   জানেন  না  যে  “কালা”  কে  কালা  বলিতে নাই , ইহাদের মাপ করুন !

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।