সাপ্তাহিক রম্য সাহিত্যে মন্দিরা হাজরা (বসু) (পর্ব – ১৩)

তবে পেইন পূর্বক একটি ওয়ার্ডে ক্রনিক পেশেন্ট হয়ে থাকাটা মোটেই আরামদায়ক ব্যাপার নয় । সেরে না ওঠা দীর্ঘমেয়াদী কয়েদীদের ঝেড়ে ফেলার প্রচেষ্ঠা একসময় এতই দৃষ্টিকটূ হয়ে উঠতে থাকে যে “একেবারে” বিদায় দে মা যেন “ঘুরে না আসি” বলবার জন্য প্রাণ আঁকুপাঁকু করতে থাকে । আমার অবস্থা যখন এতাদৃশ তখন আমাকে একটি স্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠানোর কানাঘুষো শুরু হল । বেশ কিছুদিন সেই অন্য হাসপাতালের তাবড় ডাক্তারদের অনুমতি নেওয়া , ওয়ার্ডের বড় সিস্টারদের তোষামোদ করা ( কারন এঁরা নিজ নিজ ওয়ার্ডের বেড প্রায় স্ত্রী ধনের মতো আঁকড়ে থাকেন ) , এম্বুলেন্সের লিস্টিতে নাম তোলা ইত্যাদির বেড়াজাল পেরোতে দীর্ঘ সময় লেগে যায় । দিনকয়েক প্রেরক হাসপাতালের ” নাওনা গো ,নাওনা গো” এবং প্রাপক হাসপাতলের ” সবুর করোগো , সবুর করোগো ” এর কুমীর তোর জলকে নেমেছি খেলা চলার পর সত্যি সত্যিই আমার লটারী লেগে গেল ; আমি সেই সুপার স্পেসালিটি হাসপাতালে পা রাখলাম ।
বড় হাসপাতালের এইবিষয়ে বিশ্বপ্রসিদ্ধ বড় ডাক্তারবাবু হাফমুন চশমার উপর দিয়ে সন্দিগ্ধ ভাবে ভাগ্যহীনা আমি এবং আমার ততোধিক হতভাগ্য স্বামীকে আধঘন্টাটাক মেপে জুকে দেখলেন । ডাক্তারী পরিভাষায় এর নাম ম্যারিইং দ্য সিম্পটমস্ উইথ দ্য সাইনস্ । পাশ্ববর্তি নার্স অনবরত টিসুপেপার যুগিয়ে গেলেন । শেষমেশ ডাক্তারবাবু নিশ্চিন্ত হলেন যে আমাকে পাশমার্কা দেওয়া যায় । অতঃপর এই বিশ্বপ্রসিদ্ধ ডাক্তারবাবু ( বাস্তবিক ক্ষেত্রেই এই ডাক্তারবাবুটি একজন ওয়ার্লড অথরিটি ) আমার বিশ্বছাড়া ব্যামোটি নিয়ে খানিক বিশ্রম্ভালাপের পর একটি ভার্বাল রামধাক্কা দিয়ে আমাকে আমার পুরোনো হাসপাতালে ফেরত পাঠালেন । এই ফিরতি যাত্রাপথটিতে অনেকটাই ” ছুঃ ছুঃ মন্তর লাগ্ লাগ্ ভেলকি ” নিদানটি না পাওয়ার নিদারুণ আশাভঙ্গে আমি কতকটা আমার স্বাভাবসিদ্ধ ( আমার বেটার হাফ এর মতে ) ভঙ্গিতে আমার পথ চলার সহযাত্রী আমার হতভাগ্য স্বামীটির উপর কোনোরকম কার্যকারন রহিত কিছু বাছা বাছা বাক্য বর্ষণ করি । সোজা হিসেবে তিনি ছিলেন আমার “ইমোশনাল ভালভের” এর “আউটলেট রেন্জের” ভিতর । আপনারা যাকে রোজকার ভাষায় বলে থাকেন ” ইন দ্য রঙ্ প্লেস এট দ্য রঙ্ টাইম ” ! তিনি একে নিজগুনে প্রতিবারের মতোই ” অমৃতম্ বাল ভাষিতম্ ” বলে ক্ষমা করে দিয়েছেন । যদি এ ক্ষুদ্র প্রয়াসে তাঁর চোখ পড়ে যায়, তবে আজ আমি সর্বসমক্ষে তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী । যানে ভি দো ইয়ার।