|| মানচিত্র আর কাঁটাতার, হৃদয় মাঝে একাকার || বিশেষ সংখ্যায় মন্দিরা ঘোষ

আমার পনেরোই আগস্ট

না, সেদিন রেডিওতে বন্দেমাতরম নয়,
ভোরের পাখিডাকেই ঘুম ভেঙে যেতো।
কতটুকুই বা বয়েস তখন!
গ্রামে একটি মাত্র ক্লাব
সেখানেই পতাকা উত্তোলন।
আগের দিন গ্রামের দাদারা লোহার পাইপ পুঁতে,
চারদিকে মাটি দিয়ে গোল বেদী তৈরি করতো।
নেতাজী ক্ষুদিরাম সূর্যসেনের ছবির সাথে
থাকতেন রবীন্দ্রনাথও।
দিদিরা পিটুলির আলপনা আর আমাদের
রজনীগন্ধা আর টগর ফুল তুলে মালা গাঁথার অস্থির সময়টুকু।
গর্বের বাতাস ভাসিয়ে রাখত দিনের পুঁথিঘর।
দুদিন আগে থেকে কবিতা মুখস্থের ধুম।
সেদিন ঠাকুমার থেকে সাদাখোলের খাদি শাড়ি।
আমাদের রাশভারি দাদু গল্প বলতেন।
বলতেন কীভাবে সত্যাগ্রহ আন্দোলন
এই প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছে গেলে
ঠাকুমাকে চরকা কাটা শিখিয়েছিলেন!
দাদুর খদ্দরের পাঞ্জাবিতে লুকোনো থাকতে দেখেছি
দেশ স্বাধীনের বারুদ।
আমরা পরাধীনতা দেখিনি।
দাদুর চোখ দিয়ে দেখেছি সেলুলার জেল,সূর্যসেন,
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে মাতঙ্গিনী হাজরার বুক পেতে এগিয়ে যাওয়া দৃশ্য।
সে সব গল্প শুনে টগবগ করে ফুটত রক্তের সিস্মোগ্রাফ।
পারিবারিক পোশাকে জমিদারি অহংকার,
ইংরেজ প্রভুত্বের ট্যাগ
দাদু ছিঁড়ে ফেলেছিলেন অনায়াসে।
প্রথম থেকেই তাই আমাদের ভোরের আলোয়
মিশে ছিল বন্দেমাতরম ধ্বনি।
হাতে বাঁধা পিতামহের অহিংসার সাদা রুমাল।
আমরা এখন বড় হয়েছি অনেকটা
খুলে ফেলেছি বাহুল্যের হাতঘড়ি।
এখন পনেরোই আগস্ট মানে সন্তানের
ডায়েরির পাতায় একটা লাল দাগ,
একটা ছুটির দিনের ছক কষা বিনোদন।

আমরা স্বাধীনতার রুমালে অজান্তেই
পরাধীন মেঘ এঁকে আসন্ন দুর্যোগের দিকে তাকিয়ে আছি।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।