।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় মঞ্জিলা চক্রবর্ত্তী

তৃতীয় লিঙ্গ

‘করোনা – কি নাকি একটা ভাইরাস, চোখে দেখা যায় না, দুনিয়াশুদ্ধ লোককে খাঁচায় বন্দী করলে গো’, চ্যালাদের বলতে বলতে মুখে একখান জর্দা পান ঠেসে দিলেন গুরুজী। পান ভরা মুখেই গজরাতে থাকেন,’যা…যা…যে যার ঘরে যা…, এ-ই ক’দিন কেউ জটলা করিসনে একদম।’
করোনা পৃথিবীর গৃহবন্দীর একাদশতম দিন; শহরতলির এক জনবহুল জনপদ। এখানেই ওদের আখড়া। তার সামনেই এক মিটার অন্তর ক্ষুদ্র বৃত্তের সারি। সারির মাথায় দাঁড়িয়ে দু’জন পুরুষ মানুষ, পাশেই তিনি।
লাভ-ক্ষতির হিসাব না জানা মানুষটা তাঁর আজীবনের সঞ্চিত মূল্যেই ক্রয় করেছে কয়েক’শ ক্ষুধার্তের কয়েকদিনের বেঁচে থাকার রসদ।
মধ্যবিত্ত যখন আত্মতুষ্টির উপায় খুঁজছে – কাজের মাসির বিনা কাজে বেতনটাই তো তাদের দান বাপু!
উচ্চবিত্ত, তাদের তো ধরায় দায়! কোটির নিরিখে কর ফাঁকির হিসাব কষছে দানে।
আর ভগবানের বঞ্চিত সন্তানরা তখনও দাঁড়িয়ে ওই এক মিটার দূরত্বের ক্ষুদ্র বৃত্তে!
দানগ্রহনকারী নারী-পুরুষেরা দানগ্রহণ করে যাবার বেলায় করজোড়ে ধন্যবাদ জানিয়ে যাচ্ছে দাতাকে!
পথে-ঘাটে, বাসে-ট্রেনে নিত্য দিনের হাত তালির শব্দ, এই ছ্যেল ছ্যেবিলি সিরিজের…ব্যঙ্গ দৃশ্য তখন তাঁর ফ্ল্যাশব্যাকে…!
আনপড় মানুষটি স্মিত হেসে কয়,’ সারাজীবন তোমাদের দ্বারে ভিক্ষে করে খেলাম, সেটাই আজ ফিরিয়ে দিলাম গো। তোমাদের ঈশ্বর – আল্লা – ভগবান’কে ব’লো এ পৃথিবীর অসুখ সারিয়ে দিতে!’
অলক্ষ্যে হাসেন সৃষ্টিকর্তা! না – নারী, না – পুরুষ, তৃতীয় লিঙ্গ – ওঁরাও মানুষ!
Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!