গল্পেরা জোনাকি তে মঞ্জুশ্রী চক্রবর্তী

পিকলুর রবীন্দ্রজয়ন্তী

উত্তেজনায় আজ কিছুতেই ঘুম আসছে না পিকলুর। কাল পঁচিশে বৈশাখ, প্রতি বছরের মত এবারও সকালেই বাড়ির উঠোনে হবে রবীন্দ্রজয়ন্তী, দাদু বলেন রবিঠাকুরের পুজো। দাদু পাড়ার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে মেতে ওঠেন দিনটি পালনে। জেঠু, জেঠিমা আর তাদের ছোট মেয়ে রিম্পি, পিকলুর ছোড়দি সকলেই কিছু কিছু দায়িত্ব নেন। মা সামলান রান্নাঘর, লুচি, আলুর দম আর বাবার আনা রসগোল্লা দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। সকাল সকাল উঠে মালা,ধূপ চন্দন নিয়ে ছোড়দি রবীন্দ্রনাথের ছবি সাজাতে শুরু করে। একটি টেবিলের উপর রাখা হয় আর পাড়ার ছেলেমেয়েদের বাড়ি থেকে আনা ফুলে টেবিল ভরে ওঠে। যে যেমন পারে তেমন ভাবেই গান, আবৃত্তি, নাচ করে, দাদুও গলা মেলান কখনো কখনো। রবিঠাকুরের লেখা নাটক বা কোনো গল্প নাটকের আকারে লিখে বাচ্চাদের দিয়ে করান জেঠু।

এটাই দেখে আসছে পিকলু জ্ঞান হওয়া থেকে, আজও বিকেলে ছোড়দি আর পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে রিহার্সাল দিয়েছে সে। সব গুছিয়ে রাখা আছে এখন শুধু সকালটা হওয়ার অপেক্ষা। উত্তেজনায় টগবগ করছে পিকলু তবু ঘুমোতে চেষ্টা করে। হঠাৎ দেখে তলোয়ার হাতে রক্ত মাখা গায়ে তারই মত একটি ছেলে এসে বসল, ঘামে চিকচিক করছে মুখ, অল্প অল্প হাঁফাচ্ছে। প্রথমটা ভয় পেলেও পরক্ষণেই চিনতে পারে পিকলু….. ” ডাকাতদের সঙ্গে লড়াই করে হাঁফিয়ে গেছ, একটু জল খাবে বীরপুরুষ?” বলেই উঠে নিজের জলের গ্লাসটা তার হাতে ধরিয়ে দেয়। এক নিঃশ্বাসে ঢকঢক করে পুরোটাই শেষ করে গ্লাসটা নামিয়ে রাখল বীরপুরুষ তখনই একভাঁড় দই নিয়ে ঘরে ঢোকে অমল। পিকলুর চিনতে একটুও দেরি হয় না, বলে “এত রাতে দই খাবে, তোমার না শরীর খারাপ?” অমল উত্তর দেয়, “আমি তো তোমাদের জন্য এনেছি। এখন অবশ্য রাত হয়েছে, বেশ তাহলে তোমাদের তো এখন রেফ্রিজারেটর আছে,তাতেই রেখে দাও, কালই খাবে।” হঠাৎ ঝড়ের গতিতে ঘরে ঢুকেই দই এর ভাঁড়টা নিয়ে নেয় ফটিক, বলে, “এত কিছু হিসেব করে চললে জীবনের মজা তো বিশ বাঁও জলে চলে যাবে”। অমল বলে,” তুমি আর শান্ত হলেনা ফটিক” । এমন সময় বাঁশীর সুর শুনে সকলেই তাকিয়ে দেখে দরজায় দাঁড়িয়ে তারাপদ, পিকলুর ঘরের নতুন ‘অতিথি’। সে তাড়াতাড়ি হাত ধরে ওকে ঘরে নিয়ে আসে, হঠাৎই যদি আবার পালিয়ে যায়! খাটের উপর পাঁচজনে বসে , ওদের কথোপকথনের মাঝে পিকলু চোখ বড়বড় করে দেখে তার বইএর পাতার বন্ধুদের তারই ঘরে তার পাশে, আনন্দ আর ধরেনা তার।

হঠাৎ ছোড়দির ডাকে ধড়ফড় করে উঠে বসে পিকলু, ছোড়দি বলছে,
… ” ভাই ওঠ, তৈরি হয়ে নে, তুই বীরপুরুষ আবৃত্তি করে নিলে তবেই তো তোকে মা অমল সাজাবে। আমার টেবিল সাজানো হয়ে গেছে, আমি চললাম উদ্বোধন সঙ্গীতের কোরাসটা হয়ে গেলেই তৈরি হব ফটিকের মায়ের সাজে”।
একলাফে বিছানা থেকে নেমে পড়ে পিকলু, সত্যিই অনেক বেলা হয়ে গেছে। ঘরের চারদিকে তাকিয়ে দেখে। গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে আর মনে মনে রবিঠাকুরকে একটা প্রণাম করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে সে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।