গদ্যের পোডিয়ামে মধুপর্ণা বসু

শীতে জীবন আর জীবনে শীত
ভোরের আগেও একটা ভোর আছে। সেই কাকভোর আধা আলোয় মিটমিট করে জ্বলে ওঠা পাখির চোখের মতো একা দুঃখরা ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে।
এই নরম নরম হিম পড়া শেষ রাতে কেন জানি মনে হয় আনন্দ শেষ করে রাস্তা বেঁকে গেছে নিস্তব্ধ শুন্যে।
চাঁদ ঢলে পড়েছে মরা নদীর শুকনো বুকের নীচে,
তারারা হাজার আলোকবর্ষ হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্তিতে পিছিয়ে গেছে কিছু অজানা গল্পে।
তারপর একদিন এমনই টুপটুপ অন্ধকার থেকে হিমেল হাওয়ার ছোঁয়া দিয়ে একটা চাকচিক্যহীন সাধারণ সকাল গায়ে রোদের গন্ধ মাখিয়ে দিয়ে যায়।
ভীষণ মনমরা অলস বারান্দায় বসে থাকে উৎসব শেষের কান্নারা। নিঃসঙ্গতায় আরো যেন ভাবুক দার্শনিক তার হালফিল। নীল সেই মাথা ভরা চাঁদোয়া সন্ন্যাসী রঙ মেখে কেমন ফ্যাকাসে উদাসীন। মাঝবয়েসী হেমন্তের সঙ্গিনী হয়েছি আজ। উদাস, নিরাসক্তি হাতে আমারই যত্নে বানানো ধোঁয়া ওঠা কফিতে চুমুক দেয় অসাবধানে… যেন অনিচ্ছা, যেন অনবধান মিলেমিশে সিগারের কুন্ডলীর মতো গম্ভীর পাহাড়ের কঠিন বুকে ছুঁড়ে দিচ্ছে সে।
একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি তার চোখে অনেক দূরের ছায়া, ভালোবাসা হারিয়ে যাওয়া অন্তহীন রাস্তায় ধেয়ে গেছে হেমন্তের বৈরাগ্য। পিছুটান না থাকলে যাযাবর জীবন থেকেও ব্রাত্য হয় যে এমনই তো তার উদ্দেশ্যহীন চলে যাওয়া।
সাজানো বাগান থেকে শেষ সবুজের আলাপ সাথে নিয়ে সে অল্পের স্বাদ রেখে যায় হলুদ পাতার মৃত শিরা-উপশিরায়। আর বলে গেছে শেষের কবিতা..
ভুলে যেও তুমি শেষ পাতা, রূপের হারিয়ে যাওয়ার
পরেও রয়ে যায় যে ভালোবাসার মরা দাগ আর বিশ্বাস, তাই নিয়ে তোমার কাছে ফিরে আসবো নতুন
চিরহরিৎ প্রসাধনে। তোমায় দেবো আশ্চর্য মন্ত্র জীবনের বর্ণময় কথামালা।