ধলেশ্বরীর অন্য ধারায় ভ্রমণ কাহিনীতে লোকমান হোসেন পলা

একান্ন পীঠের পূন্যতীর্থ ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির

আগরতলা শহর থেকে পঞ্চান্ন কিলোমিটার দূরে ত্রিপুরা রাজ্যের উদয়পুর শহরে টিলার উপর লালচে যে স্থাপনাটি নজরে আসে তা হলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একান্নটি শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম একটি ‘ত্রিপুরেশ্বরী’। ত্রিপুরায় ধর্মভিত্তিক পর্যটনের অন্যতম এ মন্দির দিন রাত পূণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে।
উদয়পুরে মন্দিরের প্রবেশ পথে মূল ফটকে একটি সাইনবোর্ডে মন্দিরের বর্ণনায় লেখা রয়েছে, ১৫০১ সালে রাজা ধন্যমাণিক্য এ মন্দির তৈরি করেন। পরবর্তীতে বজ্রাঘাতে কিছুটা ক্ষতিসাধন হলেও পরে তা সংস্কার করা হয়। এখানে সতীর ডান পা পড়েছিলো। কষ্টিপাথরের তৈরি এখানকার দেবীমূর্তি । প্রতিবছর দিওয়ালীতে এখানে উৎসবের আয়োজন থাকে।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, মন্দিরে দু’টি একরূপী দেবী রয়েছে, যারা ত্রিপুরা সুন্দরী ও ছোটি মা নামে পরিচিত। এছাড়াও মন্দিরের প্রাঙ্গণ কূর্ম (কচ্ছপ) এর অবিকল হওয়ায় এটি ‘কূর্ম পিঠ’ নামেও পরিচিত। (এমন বিরল কচ্ছপ চট্রগ্রামের বায়জিদ বোস্তামীর মাজারের পুকুরে দেখা যায়) এর একপাশে রয়েছে শিব মন্দিরও। ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের মতো এখানেও পূণ্যার্থীরা মোমবাতি, ধূপকাঠি প্রজ্জ্বলন করে থাকেন।
এছাড়া বেশ কয়েকজন পূণ্যার্থীকে পুজা অর্চনায় মগ্ন থাকতে দেখা গেলো। তাদের কেউ কেউ আবার পূণ্য লাভের আশায় মন্দিরের ঘর ঘিরে কয়েকবার পাক খাচ্ছেন। আর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা থাকায় পুরোহিতকে সেখানে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা গেলো।
এ বিষয়ে মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক জানালেন, এখানে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়। তবে তার আগে বুকিং দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। টিকিটের মাধ্যমে রয়েছে অন্ন ভোগের ব্যবস্থা।
কথিত আছে, সতীদেহ কাঁধে নিয়ে মহাদেব যখন ত্রিলোকে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেন তখন দেবাবিদেবকে শান্ত করার জন্য সব দেবতার স্তবকের মাধ্যমে সতীদেহ ছেদ করা হয়। ওই অংশগুলো যে স্থানে পড়ে সেসব স্থানকে কেদ্র করে এক একটি মহাতীর্থ গড়ে উঠে। আর সতীর মনবাঞ্ছা পূরণের জন্য শিবও বিভিন্ন নামে প্রতিটি তীর্থে বিভিন্ন রূপে আর্বিভাব হয়েছেন। ত্রিপুরায় তিনি (শিব) ভৈরত ত্রিপুরেশ নামে অবতীর্ণ আছেন।
আবার এও কথিত রয়েছে, মহারাজা ধন্যমাণিক্য বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে দেবী ত্রিপুরেশ্বরীকে এখানে নিয়ে আসেন।

৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে বাংলাদেশের বগুড়া জেলার ভবানীপুর গ্রামে রয়েছে একটি। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড স্টেশনের কাছে চন্দ্রশেখর পর্বতের উপরে ভবানী মন্দির ও যশোর শহরের যশোরেশ্বরী শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিত।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।