T3 || আমার উমা || বিশেষ সংখ্যায় লালন চাঁদ

উমা
রমেশ পরিযায়ী শ্রমিক। রাজ্যে কাজ নেই। তাই পাড়ি দিয়েছিলো মহারাষ্ট্রের নাগপুরে। কাজ করছিলো সে একান্ত মজুরির তাগিদেই। আর নিজের হাতে ক’টা টাকা রেখে মাস মাইনের সব টাকা ও পাড়ার ছেলে মদনের ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে দিতো।
বাড়িতে তার স্ত্রী উমা আর বারো বছরের ছেলে খোকন। খোকন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। পড়াশুনায় ভালো। উমা লেখাপড়া জানে না। তাই দুঃখ পায় মনে মনে।
খোকনের দুটো প্রাইভেট। সকালে আর সন্ধ্যায়। রমেশের পাঠানো টাকা দিয়েই খুব কষ্ট করে সংসার পরিচালনা করে উমা।
সেদিন খোকন স্কুলে। হঠাৎ দুপুরে থানার এক পুলিশ বাড়িতে এসে সংবাদ দেয়, রমেশ নাগপুরে জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে গিয়ে এক্সিডেন্টে মারা গেছে। বাকরুদ্ধ উমা। দু চোখে ভাসছে হাজার নদী। তিন দিনের মাথায় রমেশের লাশ বাড়িতে আসে কফিনবন্দি হয়ে। রমেশকে দেখেই উমা সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে। খোকন কফিন ঝাপটে ধরে হুহু করে কাঁদতে থাকে। অবশেষে গ্রামের লোকদের সহায়তায় সৎকার হয় রমেশের ।
এবার পুজো কেমন যেনো বেসুরো লাগে খোকনের। তবু একদিন সে মা’র হাত ধরে বেরিয়ে পড়ে পূজো মন্ডপে। প্রতি বছর বাবার হাত ধরে পুজো দেখতো খোকন। এবার তা হলো না।
বুকের ভেতরটা গুমরে ওঠে উমার। মনে মনে ভাবে সেই আজ বিষাদিনী উমা ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে মন্ডপে।