ভগবান অর্জুনকে বললেন যে কর্মযোগের কথা তিনি বললেন , সেইরুপ কর্ম করলে কখনও বিফলতার মুখ দেখবে না। এই রূপ কর্ম বারবার জন্ম ও মৃত্যুর মহাভয় থেকে উদ্ধার করবে। তিনি আরও বললেন যে কর্মযোগে এই বুদ্ধিকে স্থির রাখতে হয়। যাদের এই বুদ্ধি স্থির নয়, তাঁদের মন শতদিকে ধাবিত হয়।
তিনি অর্জুনকে বললেন কে কিছু মুষ্টিময় এবং অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ আছেন যারা বেদের অর্থবাদেই সন্তুষ্ট। এই সকল মানুষ মনে করেন যে এর বেশী বেদের থেকে আর কিছু জানবার নেই। এরা কামনার বসে, স্বর্গলোককেই পেতে আগ্রহী। মূলত যে কর্মের ফলে ভোগ, ঐশ্বর্য পাওয়া যায় এবং বারবার জন্মলাভ হয়, সেই কর্মই একমাত্র উৎকৃষ্ট কর্ম। এদের মন এবং বুদ্ধি – দুটোই স্থির নয়। কারণ একটাই: কামনা এবং ভোগ। অন্যদিকে সত্ত্ব, রজ এবং তম গুণের মাধ্যমে যে সকল আশা, প্রত্যাশার জন্ম হয়, তাদের পূর্ণতাই এই বেদের একমাত্র কর্ম কান্ড। ঋতুচক্র, সুখ দুঃখ ইত্যাদির দ্বারা বিচলিত হবে না। সবসময় ধৈর্যশীল হবে। কি প্রকারে নতুন বস্তু পাবে এবং সেই বিষয়ে যত্নবান হবে, এই নিয়ে সর্বদা চিন্তা করবে ও সতর্ক থাকবে।
সব স্থান জলে ডুবে গেলে, ছোট পুকুরের যতটুকু প্রয়োজন, প্রকৃত বেদ বিশ্বাসীর কাছে ওই টুকুই যথেষ্ট। ভগবান শ্রী কৃষ্ণ বললেন যে কর্মেই অর্জুনের অধিকার, কর্মফলে নয়। তাই তিনি যেন ফলের প্রত্যাশা করে কোন কর্ম না করেন। আবার কর্ম পরিত্যাগ করে জীবন অতিবাহিত করতে পারবেন, এই চিন্তাও যেন মনে কোন ভাবে না আসে। তাই সাফল্য বা বিফলতার মত কোন চক্রে আবদ্ধ না হয়ে, সকল প্রকার কর্ম ঈশ্বরের পায়ে সমর্পণ করা উচিত। বুদ্ধিকে স্থির রেখে, তাকে আশ্রয় করে, সকল কর্ম করা উচিত। এর বিপরীত মানুষকে ক্ষুদ্র রূপে বিবেচিত করে।
বুদ্ধির মাধ্যমে এই জন্মের পাপ, পুণ্যকে ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। তাই এই বুদ্ধিরূপ অস্ত্রকে ব্যবহার করে সকল পরিকল্পনা সফল করা সম্ভব। বুদ্ধির মাধ্যমে জ্ঞানী ব্যক্তিরা এই সংসার বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে, মোক্ষ লাভ করতে সক্ষম হন।